সরকারে দেশকে ‘ফোকলা’ দেশে পরিণত করেছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩১ পিএম, ২৯ জুলাই,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
সরকারে দেশকে ‘ফোকলা’ দেশে পরিণত করেছে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী(আহম মুস্তফা কামাল) বললেন যে, আমরা আইএমএফ থেকে টাকা ধার নেবো না। আমরা এখন শক্তি বাড়াচ্ছি অর্থনীতির মধ্যে। কালকে আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে তারা সাড়ে চার‘শ বিলিয়ন ডলার ধার চেয়েছে আইএমএফের কাছে।”
‘‘ আপনারা দেখবেন যে, এই সরকার মুখে সমস্ত বড় বড় কথা বলে, অনর্গল মিথ্যা কথা বলে, মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা শূণ্য হয়ে গেছে বন্ধুরা- মানে একেবারে যে আমি গরীব। ফোকলা দেশে পরিণত করেছে।”
দেশের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশে এখন ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার। এই ৩১ বিলিয়ন ডলার সঠিক নয়। এখানে ৮/৯ কোটি ডলার আছে সোনা। আর শুধু ব্যবহার করা যায় এর পরিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ১৬ বিলিয়নের বেশি নয়।”
‘‘ আজকে এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধবংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সুতরাং এদেরকে আর কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না, আর কোনো সময় দেয়া যাবে না। যত বেশিক্ষন সময় এরা থাকবে, এরা থাকলেই বাংলাদেশকে ধবংস করে ফেলবে।”
বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় তিনদিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ হয়।
সমাবেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে প্রতিবাদ জানাতে নারী কর্মীরা হারিকেন হাতে নিয়ে তার ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।মূল মঞ্চেও ঝুলিয়ে রাখা হয় একটি হারিকেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ গতকালই তিনি(ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, দেশে বিদ্যুত ও জ্বালানির কোনো ঘাটতি নেই। আমার প্রশ্ন ঘাটতি নেই তো লোডশেডিং কেনো, ঘাটতি নেই তো ৮ ঘন্টা বিদ্যুত নেই কেনো? কেনো আপনারা জ্বালানি লোডশেডিং রেশন করছেন, গ্যাস রেশন করছেন, কেনো আজকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন অশনি সংকেত?”
‘‘ আজকে দুর্নীতি করে, চুরি করে তারা(সরকার)বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সর্বনাশ করে দিয়েছে। আজকে শহরে দুই-তিন ঘন্টা বিদ্যুত যায় আর গ্রামে যেখানে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য বিদ্যুত দরকার সেখানে ৭/৮ ঘন্টা কোনো বিদ্যুত থাকে না। অথচ এই সরকার এই বিদ্যুতের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে এবং লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে।”
সমাবেশে আসা নারী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘ পত্রিকায় দেখলাম ব্যর্থ নির্বাচন কমিশনের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ছয় মাসের শিশু সুরাইয়া পুলিশের গুলিতে তার মাথার গুলি উড়ে গেছে।পত্রিকা খুলেন প্রতিদিন দেখবেন হাজারো মানুষ তারা হয় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে অথবা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে মারা যাচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের শালীনতা হানি করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। সমগ্র দেশে আজকে একটা হাহাকার পড়ে গেছে।”
‘‘ এর ওপরে মরার খাড়ার ঘা।বিদ্যুত নাই। আমাদের মা-বোনেরা এখানে হারিকেন নিয়ে এসেছেন। এই হারিকেনটা গণভবনে শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন। তার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন।শুধু এই মিটিংয়ের মধ্যে হারিকেন আনলে হবে না। যখনই অন্ধকার আসবে, যখন লোডশেডিং শুরু হবে আপনারা মোমবাতি ও হারিকেন নিয়ে বেরুবেন। এই মোমবাতি হারিকেন নিয়ে না বেরুলে আমরা আলোচিত হবো না।”
‘একটাই দাবি এক দফা’
বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া ও নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-মামলার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা আর আওয়ামী লীগকে আর সময় দেবো? আজকে তাদের পতন ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে। আজকে বিদ্যুত, এর পরে জ্বালানি তেল, এরপরে দেখবেন খাজানচি খানা শূণ্য হচ্ছে, রিজার্ভ শূণ্য হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে আকাশচুম্বি হয়ে।”
‘‘ তাই এখন আর অনেক দফা-টফা নাই। এখন একটাই দফা, এক দাবি। এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ। পরিস্কার কথা -এই মুহুর্তে পদত্যাগ করো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করো। একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সংসদকে বাতিল করো এবং নতুন একটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ক্ষমতা জনগনের হাতে দিয়ে দাও।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ আপনাদের কাছে আহবান আর সময় নেই এখন জেগে উঠতে হবে। এখন আমাদের নেতা-নেত্রীদের নেতৃত্বে জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী ভয়ঙ্কর দুর্নীতিবাজ সরকারকে একটা ধাক্কা লাগাতে হবে। সেই বিথ্যাত উক্তি- দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।”
‘‘ আসেন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলি, মানুষকে জাগিয়ে তুলি এবং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ সরকারের পতন ঘটাই।”
‘বিদ্যুত খাতে লোকসান’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের ২০২১-২২ সালে বিদ্যুত খাতে লোকশান হয়েছে একবছরে ২৮ হাজার কোটি লোকসান হয়েছে। এমনি প্রত্যেক বছরে সব মিলিয়ে লক্ষকোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিদ্যুত উতপাদন করে না, বিদ্যুত দেয় না কিন্তু ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের টাকা নিয়ে চলে যায়। কারা এই টাকাগুলো নিয়েছে জানেন?”
‘‘ সামিট গ্রুপ একবছরে নিয়েছে ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং ৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিসিএল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এই রকম ১০টা কোম্পানি যারা এই আওয়ামী লীগের সঙ্গে, মন্ত্রীদের সঙ্গে, হাসিনার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত তারা এই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুত উতপাদন না করে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘ এই বিদ্যুত আনার জন্য কুইক রেন্টাল পাওয়া প্ল্যান্টড়গুলো নিয়ে এসেছিলো কোনো টেন্ডার না করেই হাজার হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে। এটার জন্যে কোনো মামলা হবে না-ইনডেমনিটি আইন তৈরি করেছে। এই আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার-এদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। কয়েকদিন আগে দেখলেন পদ্মাসেতু খুব ফলো-টলাও করে উদ্বোধন ঘোষণা করলো। ১০ হাজার কোটি টাকার ব্রিজ তারা ৩০ হাজার কোটি টাকায় করলো। একই ভাবে দেখবেন গত ১০ বছর ধরে চলছে এই যে মাথার উপরে(জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মেট্রারেল পথ) মেট্রোরেল। উত্তরায় এখন যাওয়া যায় না সেখানের ভিআইপি রাস্তায় গেলে আপনাকে ২/৩ ঘন্টা হাতে নিয়ে যেতে হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলীতে সুরঙ্গ ব্রিজ করছে।”
‘‘ আর অন্য দিকে আমার সাধারণ মানুষের খাওয়ার টাকা নেই। কালকে টেলিভিশনে দেখেছি আপনারা যতই এই সমস্ত টানেল আর মেগা প্রজেক্ট তৈরি করেন আমার দেশের ৪২ ভাগ মানুষ এখনো দুই বেলা খেতে পায় না। তাদেরকে আজ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করতে হয়।”
সমাবেশের শুরুতে রুপান্তর সম্পাদক অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধার নিবেদনের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব। সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সমাবেশ জাতীয় চলছিল সকাল ১১টায় তার কফিন প্রেসক্লা্বের সামনের আঙিনায় জানাজার আনা হলে বিএনপির সমাবেশ ১০ মিনিট স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয় মঞ্চ থেকে।
উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, তাবিথ আউয়াল, সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক মোস্তা্ফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের সাইফ মাহুমদ জুয়েল প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।