গেস্টরুমে না যাওয়ায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৭ পিএম, ২৫ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগ পরিচালিত গেস্টরুমে উপস্থিত হতে পারেননি এক শিক্ষার্থী। সেই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, গেস্টরুমে না যাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ‘পলিটিক্যাল রুমে’ ডেকে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে গত রোববার রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং ছাত্রলীগের ভয়ে ঘটনার দিন মধ্য রাতেই হল ছেড়ে অন্য হলে বন্ধুর কাছে আশ্রয় নেন ওই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার আগের রাতে এ ধরনের ঘটনায় মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী খুব শিগগির হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন বলে জানান। পরীক্ষা থাকায় অভিযোগ জমা দিতে দেরি হচ্ছে তার। ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার শিপন মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
শিপন মিয়া বলেন, ‘মারধর করার বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারছি না। মারধরের পাশাপাশি স্টাম্প দিয়ে পেটে কয়েক বার খোঁচা দেওয়া হয়। মা-বাবাকেও গালি দেওয়া হয়। আমার সঙ্গে চরম খারাপ ব্যবহার করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ওই শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত ইয়াসির আরাফাত প্লাবন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদারের অনুসারী।
শিপন মিয়ার অভিযোগ, ছাত্রলীগ কর্মী আল ইমরান তাকে স্টাম্প দিয়ে পেটে খোঁচা মেরেছেন। ইয়াছিন আল শাহীন তার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভাগের পরীক্ষার জন্য ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারিনি। এজন্য আমাকে রাতে ছাত্রলীগের পলিটিক্যাল রুমে যেতে কয়েকবার ফোন দেন বড় ভাইয়েরা। কিন্তু পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে তাদের ফোন ধরতে পারিনি। পরে আমাকে খুঁজে ধরে নিয়ে যেতে কয়েকজনকে পাঠানো হয়। তারা আমাকে হলের ১৭৭ নাম্বার রুমে (পলিটিক্যাল রুম) ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে শাহীন আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেন। কেন ফোন ধরিনি তা জানতে চান। আমাকে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে প্লাবন আমার গালে চড় মারেন। ইমরান আমাকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটে খোঁচা মারেন। পরীক্ষার দিন রাতে এধরনের নির্যাতন করায় মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়ি। আমি এখন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলে গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য করা হয়। না গেলে জবাবদিহি করতে হয়।
এর আগে ২০১৮ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে চোখ নষ্ট হয়ে যায় এহসান রফিকের। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়। ভারতে চোখের চিকিৎসা নিয়ে এরপর এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। গত এপ্রিলে হল কর্তৃপক্ষকে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ জানানোর পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়া করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত প্লাবন এবং ইয়াছিন আল শাহীন ফোন ধরেননি। আল ইমরান স্ট্যাম্প দিয়ে নির্যাতন করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ডেকে খোঁজ-খবর নেই। জানতে চাই কে কেমন আছে। এটা তো হলের ঐতিহ্য। এটা খারাপ কোথায়? কাউকে মারধর বা নির্যাতন করা হয়নি। এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদার বলেন, 'এ ধরনের ঘটনার খবর আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নেব। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে, প্রমাণ সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমানকে ফোন দিলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।