পাউবোর জমি দখল করে আ.লীগ নেতার রেস্টুরেন্ট, উদ্বোধন করেন এমপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৬ পিএম, ১৯ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩১ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারেজ কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার) এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় ‘অবৈধভাবে’ নির্মিত আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ স্থাপনা এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি। ৩০ শতাংশ জমি দখল করে গড়ে তোলা ‘অবৈধ’ স্থাপনাটি রেস্তোরাঁ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘বৈরালী ফাস্টফুড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’। হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল এই অবৈধ স্থাপনার মালিক। গত ৭ জুলাই লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন ফ্লাড বাইপাস সড়কের পাশে আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল পাউবোর ৩০ শতাংশ জায়গা জোরপূর্বক দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
কাজটি বন্ধ করার জন্য ২০২১ সালের ১১ আগস্ট তাকে নোটিশ দেয়া হয়। কাজ বন্ধ না করায় পুনরায় ২৫ আগস্ট তাকে নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু এতেও তিনি কাজ বন্ধ করেননি। ১ সেপ্টেম্বর আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে ফলপ্রসূ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদদৌলা বলেন, তিস্তা ব্যারেজ কেপিআই এলাকায় পাউবোর জায়গা থেকে আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের কাছে দু দফা লিখিত আবেদন করা হয়। প্রথম আবেদন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় চলতি বছর ৬ জুন।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন কেন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সেটা আমি বলতে পারবো না। আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় কাজ করছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাদের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ জমির মালিক আমার বাবা-দাদা। পাউবো এই জমি অধিগ্রহণ করলেও টাকা পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। আমার নির্মিত স্থাপনা বৈধ। আমি এখানে বৈধভাবে ব্যবসা শুরু করেছি। তবে এর আগে গতবছর অভিযুক্ত আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, তিনি নিয়ম মেনেই ফ্লাড বাইপাস সড়কের পাশে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এই জায়গা তিনি জমির মালিকের কাছ থেকে কিনেছেন। তবে কার কাছ থেকে কিনেছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। উচ্ছেদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনাটি নির্মাণ করছিলেন। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পাউবো কর্তৃপক্ষ আমাকে কোনদিনই কিছু জানায়নি।
তিনি বলেন, আমি তিস্তা ব্যারেজের পাশে একটি পাবলিক টয়লেট বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেপিআই অজুহাতে পাউবো কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। সেখানে স্থাপনা তৈরি হয়েছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করা হয়েছে এটা কিভাবে উচ্ছেদ করবে সেটা পাউবো কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন জানে। আমি শুধু প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করেছি।