বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার চোখে সর্ষে ফুল দেখছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪১ পিএম, ১৯ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিদ্যুৎসহ চলমান নানা সংকট সরকারকে পতনের দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার চোখে সর্ষে ফুল দেখছে। জনগণ ফুঁসে উঠছে এবং সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে। বিদ্যুৎ সংকটসহ দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের রিজার্ভের সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার তারা (সরকার) এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে দিয়েছে। এই টাকাটা কাদেরকে দিয়েছে? তাদের সেই সমস্ত লোকজন যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে বিভিন্নভাবে দেশে-বিদেশে এবং তারা এই টাকাটা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, বাড়ি-ঘর বানিয়েছেন আর দেশের মধ্যে সেই টাকা আর আসছে না। এই তো শুরু, দিস ইজ এ বিগেনিং। আপনি এরপরে দেখবেন, আমি না, অর্থনীতিবিদরা বলছেন সব জায়গাতেই যে, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুআে তৈরি হচ্ছে। এখন গভর্নমেন্ট সর্ষে ফুল দেখবেন, দেখতে হবে। জনগণ ফুঁসে উঠছে, ফুঁসে উঠবে এবং তাদের (সরকার) পতন ত্বরান্বিত হবে।
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে চার দলীয় জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত নির্ভর করে পোশাক শিল্পের ওপরে। সেই খাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদার ঘাটতি হলে সমস্যা তৈরি হবে, পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হবে। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ সম্পূর্ণভাবে অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেখানে যখন রেশনিং সিষ্টেম চালু করা হবে তখন কিন্তু উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকবে। অর্থনীতিবিদরা যেটা বলছেন, এটা একটা টেম্পোরারি ম্যাজার। এটাকে কাটাতে হলে তাদেরকে (সরকার) স্থায়ী সমধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইদিকে কিন্তু সরকার যাচ্ছে না। তারা দাম বাড়াচ্ছে না। দাম বাড়ালে জনগণ বিগড়ে যাচ্ছে। অলরেডি দাম তো বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিতে অত্যন্তভাবে ক্ষতির সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, আপনি দেখুন যেসব পাওয়ার প্ল্যান্ট কাজ করছে না তাদেরকে পয়সা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে কিন্তু বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেককে ডলারে পে করতে হয়। এই সমস্যাগুলো বলা যেতে পারে সামগ্রিক সমস্যা। এই সমস্যাগুলো সৃষ্টির বিষয়ে আমরা আগেই বলেছি যে, সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং দুর্নীতি চরম জায়গায় পৌঁছছে। সব জায়গাতে তাদের একটাই লক্ষ্য দুর্নীতি করা। এটা অস্বীকার করলে তো চলবে না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আজকে এমন একটা জায়গায় চলে গেছে, যেখানে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে গেছে। ঠিক একইভাবে শ্রীলংকাতে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আপনারা বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ৭টা দেশকে ওয়ার্নিং দেয়া হচ্ছে যে, শ্রীলংকার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এটা তো হয়ে যাচ্ছে..।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা তাদের দিতে হয়েছে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই। এখন যে বলা হচ্ছে ৬টা ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকবে, বাকিগুলো কিন্তু পয়সা পেতেই থাকবে। এরা (ছয়টা)ও কিন্তু পয়সা পাবে। পত্রিকায় দেখেছি, ১৭৬০ কোটি টাকা বছরে তাদের জন্য গুনতে হবে। এতে প্রমাণিত শুধুমাত্র দুর্নীতি করার জন্য কোনো বিশেষ বিশেষ কোম্পানিকে অর্থ বানানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে তাতে নিজে উপকৃত হওয়ার কারণে এই কাজটা করেছে তারা। বিদ্যুৎ না দিয়ে ওইসব কোম্পানি মালিকদের এভাবে টাকা দেয়া হচ্ছে, এরা এভাবে টাকা চুরি করেছে। একদিন তাদেরকে এর হিসাব দিতেই হবে। এই হিসাব না দিয়ে তারা যেতে পারবে না। তাদেরকে জনগণের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নয়, প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা মেগা প্রজক্টে দুর্নীতি করার জন্য তারা (সরকার) জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নিয়ে সেই টাকা প্রদান করা হচ্ছে সেটার দিকে তাদের কোনো নজর নেই। যার ফলে কী হয়েছে? আজকে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার প্রধান কারণ দুর্নীতি। আমরা বার বার বলেছি, এমন কোনো পরিকল্পনা, এমন কোনো প্রজেক্ট হাতে নেয়া উচিত নয় যেটা আমরা চালাতে পারবো না। আমরা ওই ধরনের জুতাই কেনা উচিত, যে ধরনের জুতা আমি পরতে পারবো, আমাদের পায়ের মাপের বাইরে জুতা কিনলে তা পরা সম্ভব না। আজকে তাই ঘটছে। এটার মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি এবং আমরা অবিলম্বে এই দুর্নীতির কারণে সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
সিইসির বক্তব্য হাস্যকর বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল) এখন হাস্যকর ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। আপনাদেরকে বলি, আওয়ামী লীগ ও ইলেকশন কমিশন তারা মনে করেন যে, দেশের সব মানুষ আহাম্মক। তাহলে তো হবে না। এটা গত ১০ বছর ধরে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একথা শামসুল হুদা সাহেবও বলেছেন, শেষ মুহূর্তে একেএম নুরুল হুদা সাহেবও তার চাকরি যাওয়ার পরে এই কথা বলেছেন। আর উনি এখনই বলে দিচ্ছেন যে, এটা সম্ভব না, ইটস নট পোসেবল। গতকাল তিনি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এই প্রশ্নটা ইলেকশন কমিশনের কাছে না, এটা হচ্ছে সরকারের কাছে। যারা পরিকল্পিতভাবে তত্ত্বাধয়াক সরকারের বিধান বাতিল করেছে এবং যারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদেরকে আবার সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সংকট উত্তরণের কোনো পথ নেই।