জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের ওপর হামলা : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৯ পিএম, ১৯ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এই সরকারের আমলে একের পর এক বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের, উপাসনালয়, বসতবাড়ি ও ব্যবসা কেন্দ্রে পরিকল্পিত হামলা, জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সোমবার রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় সম্প্রতি নড়াইল জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবক কর্তৃক প্রদত্ত স্টেটাসের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে, এই ঘটনা সরকার বিরোধী জনরোষকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার অপতৎপরতা। বর্তমান আওয়ামী লীগের অনির্বাচিত সরকারের উদ্দেশ্যমূলক নিষ্ক্রিয়তাই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ। এই সরকারের আমলে একের পর এক বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের, উপাসনালয়, বসতবাড়ি ও ব্যবসা কেন্দ্রে পরিকল্পিত হামলা, জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন চক্রান্ত। জনগণ যখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, জ¦ালানি তেল, গ্যাস ও পানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ফুঁসে উঠছে তখন সেই জনরোষকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন অপচেষ্টা। সভায় অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। সভা একই সঙ্গে ভিন্ন ধর্মালম্বীদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানায়। সভায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট বাবু নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির সদস্য থাকবেন যথাক্রমে ১) অনিন্দ ইসলাম অমিত, ২) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ৩) অ্যাড. ফাহিমা নাসরীন মুন্নি, ৪) ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এম.পি ৫) অমলেন্দু অপু ও ৬) নিপুন রায় চৌধুরী। কমিটি আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করবেন এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।
৩। সভায় গত ১৬ জুলাই রাতে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে সমরাস্ত্র নিয়ে আসার সময় ইউক্রেনের একটি কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় আইএসপিআরের দু রকম বক্তব্যে বিষ্ময় প্রকাশ করা হয়। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ভাষ্য এবং আইএসপিআরের বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় জনগণের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে সরকারের নিকট প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়।
৪। সভায় সম্প্রতি প্রদত্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য “কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়; আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে, আমরা অস্থিরতা বন্ধ করতে পারবো না,” এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচন সম্পর্কে বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি বরাবরই বলে আসছে যে, দলীয় সরকারের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনই কোনও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ, অবাধ, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না। একমাত্র নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ। নির্বাচন কমিশন সংহিসতা বন্ধ করতে না পারার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। প্রমাণিত হয়েছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন কতটা ক্ষমতাহীন। আর সেই কারণেই বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল বর্তমান নির্বাচনকালীন সময় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। সভায় অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও পদত্যাগের পরে নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।
৫। সভায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক আবারও পানির দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এই নিয়ে গত ১৪ বছরে অন্তত ১৫ বার পানির দাম বাড়ানো হলো, অথচ ঢাকায় নাগরিকেরা শতকরা ৪০ ভাগও সুপেয় পানি পায় না। উপরোক্ত ওয়াসার পানি ময়লা ও জীবানুযুক্ত হওয়ায় পান করার অযোগ্য। সভায় অবিলম্বে পানির দাম কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং পানির গুনগত মান বৃদ্ধি করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক ৫৩টি অত্যাবশকীয় ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। অবিলম্বে পানি ও ঔষধের মুল্য হ্রাসের দাবি জানানো হয়। মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, অঙ্গ সংগঠনসমূহকে মহানগর এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬। সভায় বন্যার কারণে স্থগিত দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানানো হয়।