উন্নয়ন ট্যাবলেট দিয়ে দেশের জনগনকে আর ভোলানো ‍যাবে না : মির্জা আব্বাস

উন্নয়ন ট্যাবলেট দিয়ে দেশের জনগনকে আর ভোলানো ‍যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা আব্বাস।  

আজ সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ''সরকার উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং করবেন আর উন্নয়নের কথা বলবেন। উন্নয়নের ট্যাবলেট বেশি দিন খাওয়ানো যাবে না। উন্নয়নের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে এখন শ্রীলংকা বমি কইরা দিছে, শ্রীলংকা কিন্তু এখন উন্নয়নের ট্যাবলেট খায় না। সেখানে খালি উন্নয়ন বলতে বলতে সব শেষ করে দিয়ে এখন চাকুরি-বাকুরি গোল কইরা দেশের রাষ্ট্রপতি ভাইগা চইলা গেছে সিঙ্গাপুরে। আপনাদের যাওয়ার জায়গা আছে অবশ্য। ঠিকানা বলতে হবে না, আপনার ঠিকানাই আগেই করা আছে।"

মির্জা আব্বাস বলেন, ''সরকার ঘোষণা দিয়েছে আগামীকাল থেকে লোড শেডিং শুরু হচ্ছে। ওইদিন বললেন যে, জনগনের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। কুইক রেন্টাল দিয়ে আপনারা বিদ্যুত দিয়েছেন, বিদ্যুতের আর অভাব নাই। এখন আবার বলছেন উল্টো কথা- লোড শেডিং করতে হবে। তাহলে এতো টাকা দিয়ে কুইক রেন্টাল কেনো করলেন? যেই কারণে বিদ্যুত নাই। যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মালিক তারা কিন্তু বসে বসে টাকাটা পাবেন, বিদ্যুত থাকুক বা না থাকুক, বসে বসেই টাকা পাবে তারা। এখন আমাদের প্রশ্ন তাহলে এতো টাকা নিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়া প্ল্যান্ট কেনো করা হলো? এতো টাকা নিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে কেনো সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র করা হচ্ছে?"

তিনি বলেন, ''বিদ্যুত খাতে কুইক রেন্টালের নামে এতো চুরি করার পরেও যদি লোড শেডিং হয় আমার তো মনে হয় এই লোড শেডিংই সরকারের ক্ষমতা ত্যাগের কারণ হতে পারে। এভাবে মানুষ কিন্তু অসহিষ্ণু হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অসহিষ্ণু হচ্ছে।"

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সেমিনার কক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির রমনা থানার ১৯ নং ওয়ার্ড এবং শাহবাগ থানার ২১ নং ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, '' আজকের পত্রিকায় দেখলাম একটি খবর- 'তলোয়ার নিয়ে আসলে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে'। এই যে নির্বোধ ব্যক্তি(কাজী হাবিবুল আউয়াল)। আগে তো ছিলো ছাগল নুরুল হুদা(কে এম নুরুল হুদা), এটা একটা পাডা একটা, এনার (কাজী হাবিবুল আউয়াল) কোনো বুদ্ধিসুদ্ধি নাই। তলোয়ার-রাইফেল। আরে ভাই, তলোয়ার তো অনেক আগে চলেছে, সেই অটোম্যান সামাজ্যের পরে তো আর তলোয়ার আসে নাই। আপনি তলোয়ার কোত্থেকে আবিস্কার করলেন? তলোয়ার আনবে কে? রাইফেল হাতে নেবে কে? এটা উনাকে ঠিক করতে হবে। উনি কী রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবেন? সেটাও তো পারবেন না। 

তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- এরকম এই নির্বাচন কমিশন, এই ফালতু নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।"

কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাংসদ বাহারকে ভোটের সময়ে এলাকা থেকে বের করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যর্থতার সমালোচনাও করেন তিনি।

তিনি বলেন, '' এই সরকারের অধীনে যদি বিদেশ থেকে তৈরি করা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আসা হয় তবুও এই  সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হবে না। এখানে পুলিশ প্রশাসন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেথানে দলীয়করণ করা হয়েছে সেখানে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। সংসদ ভাঙতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ভাবে গঠন করতে হবে। তারপরে নির্বাচন হবে।"

মির্জা আব্বাস বলেন, ''এই আজকে বাংলাদেশে ডলারের ক্রাসিস। আজকে বলা হচ্ছে যদি এখন বিদেশ থেকে কোনো কিছু আমদানি করতে হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। আমি ব্যবসা করবো এটা আমার লিবার্টি। আমি এলসি খুলবো, আমার ডলার যাবে, মালামাল আসবে। আমার দেশে ডলার নাই। কেনো নাই? কারণে ট্রাংকে ট্রাংকে ভর্তি করে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের বহু ডলার বিদেশে পাঁচার হয়ে গেছে। সেইদিন পত্রিকায় আসলো যে, সুইস ব্যাংকে ৩/৪ হাজার কোটি ডলার রেগুলার জমা হচ্ছে। আমার দেশের ডলার যদি সুই ব্যাংকে চলে যায় এদেশের মানুষ বাঁচবে কিভাবে।"

মির্জা আব্বাস বলেন, ''আজকের প্রধানমন্ত্রী জাতিকে বিভক্ত করে দেশের উন্নয়ন করছেন। এমন উন্নয়ন করছেন যে আমরা আজকে ছোট্ট একটা জায়গায় মিটিং করছি। আমাদেরকে বাইরে মিটিং করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আজকে প্রধানমন্ত্রীকে সন্মানের সাথে একটা কথা বলতে চাই, আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোত ঘর থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় যাবো। সমস্ত মিছিল যেকোনো একটা চৌরাস্তায় গিয়ে আমরা মিলিত হবো। এই মিছিল রমনা থেকে বের হবে, শাবাগ থেকে বেরুবে, শাহজাহানপুর থেকে বের হবে, ফরিকরাপুল থেকে বের হবে, মতিঝিল থেকে বের হবে। সব একসঙ্গে আমরা ওই বঙ্গভবন কিংবা সরকারের সচিবালয়ে ঘেরাও করবো- মনে রাইখেন। সময় আসতেছে, গুলি করবে? অনেক গুলি কিনেছেন বিদেশ থেকে।"

তিনি বলেন, ''এই যে একটা বিমান ক্রেস হলো, আমি খুব দূ:খের সঙ্গে বলছি অস্ত্রসহ একটা প্লেন ক্র্যাশ হলো। এই অস্ত্র কার জন্য ওরা আনতে গিয়েছিলো? এ বিষয়ে একটা পরিস্কার ব্যাখ্যা আমরা চাই।"

মহানগর দক্ষিনের যুগ্ম আহবায়ক লিটন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও  এমএ হান্নানের পরিচালনায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহবায়ক ইউনুস মৃধা ও মোশাররফ হোসেন খোকন বক্তব্য রাখেন।