সরকারকে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না : মির্জা আব্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৪ পিএম, ১৬ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
সরকারকে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা আব্বাস।
আজ শনিবার (১৬ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের দমন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ''বহু খুন, হত্যা দেখেছি, আর আমরা তা দেখতে চাই না। এবার প্রতিরোধ হবে, এবার প্রতিবাদ হবে। সরকারকে আর কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। আপনারা এখন প্রস্তুতি নিন এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এক বদিউজ্জামান ধনির হত্যার বিচার করে লক্ষ মানুষের হত্যার বিচার করা যাবে না এই সরকারের পতন না করা পর্যন্ত।"
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে যশোর যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনি হত্যার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। গত ১২ জুলাই যশোর শহরের বেজপাড়া চোপদারপাড়া এলাকাং যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধনিকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
মির্জা আব্বাস বলেন, ''আজকে বদিউজ্জামান ধনির খুনকে সরকার বিএনপির ওপর চালান করতে চাচ্ছে। যে এটা অভ্যন্তরীন কোন্দাল। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা কোনো অভ্যন্তরী কোন্দল নয়। এই হত্যাকান্ডটা আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে এবং একের পর এক হত্যা করে বিএনপি কর্মীদের ভয় পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপির কর্মীরা কখনো ভয় পায় না। আমরা বদিজ্জামান ধনি হত্যার সঠিক বিচার আশা করছি। যদি এই হত্যাকান্ডের বিচার না হয় বিএনপি এর বিচার করবে। আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।"
মির্জা আব্বাস বলেন, ''পত্রিকায় আজকে আসছে বিএনপি নাকী একটি পতিত দল। যিনি (ওবায়দুল কাদের) পতিত দল বলেছেন, তার সম্পর্কে দুই-একটা কথা না বললেই নয়, বলতেই হয়। একসঙ্গে (১/১১ সময়কাল) জেলে ছিলাম। সারাদিন জেলখানায় প্রায় কান্নাকাটি করতেন। আর ওই সময়ে অনেকের সামনেই কান ধরে বললেন, আমি জীবনে আর রাজনীতি করমু না। আজকে উনার মুখ থেকে বেরিয়েছে পতিত দল...। উনার সম্পর্কে কথা হয়েছে কাউয়া কাদের.. তার মুখ থেকে বের হয়েছে পতিত দল কথা যার অর্থ আমি বুঝতে পারিনি।"
তিনি বলেন, বিএনপি যদি পতিত দল হয়ে থাকে তাহলে এতো ভয় কেনো আপনাদের? আমাদেরকে মিছিল-মিটিং করতে দেননা। একটা পতিত দল মিছিল করবে, মিটিং করবে আপনাদের ভয়ের কি আছে? আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, কারাবন্দি, আমাদের নেতা তারেক রহমান অসুস্থাবস্থায় ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন, আল্লাহর রহমতে উনি অনেকটা ভালো আছেন, বিদেশে আছেন দেশে নাই। তারপরও দেশনেত্রীর প্রতি ভালোবাসা, নেতৃত্বের প্রতি, তারেক রহমানের প্রতি অকুষ্ঠ ভালোবাসার কারণেই এই দল এখনো শক্তভাবে টিকে আছে, ভেঙে-পড়ে যায়নি।"
তিনি আরোও বলেন, ''কিন্তু, যদি আপনার নেত্রী(আওয়ামী লীগ) বা কাউয়া কাদেররা কোনো রকমে ভাইগা যায়-অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? এই আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাওযা যাবে না। এই কাদের সাহেবই বলেছেন তাদের কোনো এক মিটিংয়ে যে, যা কিছু কামাইছেন কিছুই কিন্তু থাকবে না, সব টাকা পয়সা বালতি-ঘইটা ফেইলা দেশ থেকে পালাইতে হইবো।"
বিএনপি নেতা আব্বাস বলেন, ''উনারাই দেশ থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ যত লুট, যত খুন করেছে এর বিচার তো একটা একটা করে আমরা করবো। যুদ্ধাপরাধীর বিচার যদি ৪০ বছর পর হতে পারে, আপনাদেরও দরকার পড়লে মরনোত্তর বিচার হবে সেদিন সময় আসবে। এই দেশকে, দেশের মানুষকে যে কষ্ট আপনারা দিয়েছে সেই কষ্ট মানুষ কখনো ভুলবে না।"
মির্জা আব্বাস বলেন, ''আপনারা বলে এতো উন্নয়ন করেছেন- দেশের মানুষ খুশি হয়ে ভোট দেবে-ছেড়ে দেন না। আপনারা তো একটাই চেয়েছি-বেশি কিছু চাইনি। আমরা বলেছি, নিরপেক্ষ সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার। এরকম একটা সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো। ওই সময় পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, নিরপেক্ষ সরকার আসবে, তাদের অধিনে নির্বাচনে যাবো। তারপরে আপনি যত খুন, যত জখম করেছেন আমার কোনো আপত্তি নাই, তারপরেও যদি মানুষ আপনাদেরকে ভোট দেয় ইনশাল্লাহ আমরাও আপনাদের মেনে নেবো। কিন্তু যদি কারচুপি করে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেসিনে ভোট হয়..। ইভিএম চিনি না আমরা, ইভিএম বুঝি না আমরা, দরকার নাই এটির। বিএনপি আপনাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না-এটাই সঠিক।"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ''আমাদের কথা বলার সময় নাই। উই শুড গো ফর ডাইরেক্ট অ্যাকশন। খালেদা জিয়ার সামনে আমরা শ্লোগান দিতাম- অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অ্যাকশন করলে কড়া রি-অ্যাকশন। এখন আমাদের সেই ডাইরেক্ট অ্যাকশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।"
মহানগর উত্তর যু্ব দলের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল ও দক্ষিনের খন্দকার এনামুল হক এনামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি কামারুজ্জামান দুলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক সরকারসহ যুবদলের মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।