'গণতন্ত্র অবরুদ্ধ' রেখে হাজারটা পদ্মাসেতু করেও লাভ হবে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৯ পিএম, ৫ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩৪ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
'গণতন্ত্র অবরুদ্ধ' রেখে হাজারটা পদ্মাসেতু করলেও বর্তমান সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
'দেশের জনগণ আমাদের পাশে থেকে বার বার ভোট দিচ্ছে। আমাদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র এহেন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ''নির্বাচন দিয়ে দেখুক না উনাদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে? হাজারটা পদ্মাসেতু করেও কোনো লাভ হয় না। আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিলো পাকিস্তান আমলে... কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, জনগণ যদি গণতন্ত্রকে না পায়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, তার অধিকার যদি না থাকে, তার ভোটাধিকার না থাকে সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।"
তিনি আরও বলেন, ''আর ভোট দিচ্ছে কোথায়? মানুষ ভোট দিতে পারছে কোথায় যে, জনগণের আস্থাটা গ্রহন করছেন তিনি কিভাবে? তিনি তো কাগজে-কলমে সিল মেরে আগের রাত্রে ভোট দিচ্ছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের মতো আর কি।"
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ''নির্বাচনের বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হবে কিনা তার ওপর। যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হয় তাহলে আমাদের অংশগ্রহন অবশ্যই দৃশ্যমান হবে। আর যদি না হয় হবে না। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি বাংলাদেশে যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয় এখানে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। তা নাহলে এখানে কোনো মতেই আপনার যদি একেবারে স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন তাহলেও সে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন না-ইমপোসেবল।"
গত ২৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে টানা ৮দিনে উত্তরার বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেন মির্জা ফখরুল। রোববার করোনামুক্ত হওয়া্র মঙ্গলবারই গুলশানের কার্যালয় এসে বিএনপি মহাসচিব প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এতে সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''সরকার বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তি পূর্ণবাসনে সরকারের কর্মকান্ড দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে দ্রুত মানুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবি জানানো হয় স্থায়ী কমিটির সভায়।"
তিনি বলেন, ''দেশজুড়ে জনশুমারী ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে বুঝা যায় কি অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে জনশুমারী সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায় হওয়ার প্রকৃত তথ্য কখনোই পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণকে এবং বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সকল তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিএনপি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারী ও গৃহগণনার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, ''সম্প্রতি সাভারে স্কুল শিক্ষক হত্যার ঘটনা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারাদেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকোরের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় সমাজের সকল পর্যায়ে নীতি-নৈতিকতা চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকারর গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।"
সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপতি ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদেনে 'বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলেরর দাবিতে' সন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, '' এটাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করেছে।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''প্রচন্ড লোডশেডিং হচ্ছে- এটা ভয়াবহ। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতের যে কথা আজকের এই অবস্থা(লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে, আমরা যেটা কথাগুলো বলে আসছি- সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা। এগুলো (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়ি-ঘর তৈরি করা। এখন এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমরা যেটা বলে আসছিলাম আলটেমেনলি দেখা যাবে যে, সবই একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা। সেই ভঙ্গুর অবস্থার দিকেই আমরা চলে যাচ্ছি।"
তিনি বলেন, '''ইডিএফ' না দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪ দশমিক শূণ্য দুই বিলিয়ন ডলার। ওই ধরনের প্রায় সবটাই(ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আইএমএফ এই ধরনের ঋণের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বলললেই চলে।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''সরকার অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি ভঙ্গ করে শুধুমাত্র নিজেদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালীদের ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ইডিএফ্ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব সামাজিক ও অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির গতকালের সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।"
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।