পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫১ পিএম, ২২ জুন,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩৬ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনারা যাবেন কি না প্রশ্ন করা হলে বুধবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা আমি খুব পরিষ্কার বলতে চাই। যারা মানুষ হত্যা করে, যারা এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মায় ডুবিয়ে মারতে চায়, যারা এদেশের সবচেয়ে প্রথিতযশা এবং এদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান অর্জন করে আনা ব্যক্তি, গোটা পৃথিবীতে যিনি নন্দিত মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তাকে চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে চায় তাদের আমন্ত্রণে বিএনপির কোনো নেতা বা কোনো কর্মী কখনোই যেতে পারে না। সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের উপসচিব দুলাল চন্দ্র সূত্রধর পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাসচিবসহ ৭ নেতার নামে আমন্ত্রণ কার্ড দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে হস্তান্তর করেন। আমন্ত্রণ পাওয়া অন্য নেতারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন সেই প্রেস কনফারেন্সে আবার পূর্বের মতোই তার যে স্বভাবসুলভ বক্তব্য সেই বক্তব্যের মধ্যে তিনি যে মিথ্যাচার করেন তার আবার প্রমাণ রেখেছেন। এর মধ্যে আছে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলেন। হুইচ ইজ এ বার্টান্ড লাই। আমাদের কাছে প্রমাণ হচ্ছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি রিপোর্ট যেটা হচ্ছে, মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের যেটা বর্তমানে আছে। এই রিপোর্টের কপিও আছে আমাদের কাছে, আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। এই রিপোর্টটি ২০০৪ সালের মার্চের ৩ তারিখ সাবমিট করা হয়েছিল। এটা হচ্ছে ইন্টারিয়ম রিপোর্ট অন দ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি অব পদ্মা ব্রিজ। এতো একটা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অফিসিয়ালি দেয়ার পরেও কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারেন যে, বিএনপি গভর্নমেন্ট আসার পর এটাকে বন্ধ করে দেয় এবং এটা কোনো কাজ করেনি। এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তারা পরবর্তীকালে কাজ করেছেন। তখনই এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপান যোগাযোগ করে যে ফান্ড তার জন্য আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সমানে বলে যাচ্ছেন বিএনপি সরকার এটা বন্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। কাজ শুরু করা পরে বিশ্বব্যাংক যখন ফান্ড বন্ধ করে দিল দুর্নীতির কথা বলে তখন থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়েছে। সেটার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করেন, ড. ইউনূসকে দায়ী করেন। কোথায় পেলেন তিনি? কিভাবে দেখলেন তিনি যে, দুর্নীতির কথা বিএনপি বা ড. ইউনূস তুলেছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা তোলার পরে দেশবাসী জানল, আমরা জানলাম সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে। আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট এখন ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ এবং বিএনপিকে জনগণের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা-এগুলোর কোনোটাই কাজ হবে না। কারণ দেয়ার আর টুলস এন্ড ডকুমেন্টস।
মির্জা ফখরুল সমীক্ষার বিবরণী তুলে ধরেন বলেন, ‘‘এই সমীক্ষার সামারিতে বলা হয়েছে যে, এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৫ মিটার, পাইলের সংখ্যা ২৬৮টি, নদী শাসন ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য (উভয় পার্শ্বে) ১২ দশমিক ১৬৩ কিলোমিটার, প্রকল্পের (মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে) ইআইআরআর ১৪ দশমিক ৮০% রেলসহ, বিসিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭৯০ দশমিক ৫০ হেক্টর (অধিগ্রহণ-৬১৬ দশমিক ৫ হেক্টর, হুকুম দখল ১৭৪ দশমিক ০ হেক্টর), ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৭০ সিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ হাজার। ২০১৫ সালে মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক ২১ হাজার ৩০০টি যানবাহন পারাপার করবে এবং ২০২৫ সালে হবে ৪১ হাজার ৬শটি। এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০০৮ সালের অক্টোবর নাগাদ শুরু এবং ২০১৩ সালের মার্চ নাগাদ শেষ হবে। এটাই পদ্মা সেতুর বিসিক। এটাকেই কেন্দ্র করে তারা পদ্মা সেতুর পরবর্তী কাজ করেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সমীক্ষা অনুযায়ী মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৫৮৭ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ ও জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করার পর ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যায়। এই সেতু নির্মাণে সময় লাগবে প্রায় ৫৪ মাস। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।