বগুড়ায় আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা রউফ জেলমুক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৬ পিএম, ১৫ জুন,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১৯ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বগুড়ার আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ওই সংগঠনের বহিস্কৃত নেতা আব্দুর রউফ।
আজ বুধবার বগুড়া জেলা কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জেলা সুপার মনির আহমেদ নিশ্চিত করেছেন।
জেল সুপার বলেন, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালত রউফকে জামিন দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত নথি গতকাল মঙ্গলবার আদালতে এসেছে। আজ বুধবার সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এর আগে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রউফকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওই গত বছরের ১৬ মার্চ নিজ দলীয় নেতা তাকবীর ইসলাম খানকে হত্যার অভিযোগ বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠার পরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
তাকবীর বগুড়া জেলা ছাত্রীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকবীর মারা যাওয়ার দিনেই রউফকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ওই সময় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীদের কাছে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ( ১১ মার্চ) জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুর রউফ ও তাকবীর ইসলাম। তারা সবাই মোটরসাইকেলযোগে যাচ্ছিলেন। তারা গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে সেখানে তাকবিরের মোটরসাইকেলের সঙ্গে আব্দুর রউফের সমর্থক জাহিদ হাসানের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক সময় জাহিদের পক্ষ নিয়ে এগিয়ে আসেন আব্দুর রউফ। ওই সময় সভাপতি তিতাস ও সাধারণ সম্পাদক অসীম তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার মিমাংসা করে দেন।
মিমাংসা হলেও ঘটনার রেশ ছিলই। ১১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় তাকবীর সহযোগীদের নিয়ে শহরের সাতমাথায় আ.লীগের দলীয় কার্যালয়ের অপর পাশে ছিলে। আব্দুর রউফ দলীয় কার্যালয়ে আসলেই তার ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাকবীরের। এ বিষয়টিও জানতে পারেন রউফ। তিনি সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে না এসে রাতে তার সহযোগীদের সঙ্গে সাতমাথায় আসেন। তখন মুখোমুখি হন আব্দুর রউফ ও তাকবীর। শুরু হয় তাদের বাকবিতণ্ডা। একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডা রুপ নেয় সংঘর্ষের। ওই সময় আহত হন অন্তত দুই গ্রুপের ৯ জন। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন তাকবীর।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকবীরের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তাকবীর বলেন, ‘আমার ডান পায়ে হাঁটুর নিচে ফ্র্যাকচার হইছে। ওখানে এসএস পাইপ দিয়ে আর রড দিয়ে মারছে; চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। বাঁ হাতের কজ্বিতে আর কনুইয়ের মাঝখানেও মারছে, সেখানে ফ্র্যাকচার হইছে, ওখানে দুটা সেলাইও পড়ছে। মাথার পেছনে চারটা সেলাই পড়ছে, ওখানে চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। আমার কোমরের পাঁজরের নিচে দুই পার্শ্বেই দুটি স্টেপ (ছুরিকাঘাত) করেছে, আট ইঞ্চি করে ক্ষত হইছে। চার চারে আটটা সেলাই পড়ছে, স্টেপটা রউফ নিজেই করছে। শরীরে আরো অনেক জায়গায় ক্ষত হইছে, পুরো শরীরে পিটিয়েছে।’
পরে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকেল ৩ টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
হত্যাকাণ্ডে তাকবীরের মা আফরোজা ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলার প্রধান আসামি করা হয় রউফকে।