প্রস্তাবিত বাজেট 'বাস্তবতা বর্জিত' : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ১১ জুন,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
প্রস্তাবিত বাজেট 'বাস্তবতা বর্জিত' অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, এটা কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্ঠদের জন্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপনের দুইদিন পর আজ শনিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া দেন।
তিনি বলেন, ''এই বাজেট কোনো অর্থেই সাধারণ মানুষের বাজেট নয়। এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট বর্তমান কঠির সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট, এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।"
কোনো অথেই বাজেট সাধারণ মানুষের নয়, ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের' তার ব্যাখ্যায় মির্জা ফখরুল বলেন, ''পাচারকারীরদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোজ করার বৈধ্যতাতেই এবারের বাজেট প্রনয়ন করা হয়েছে। আরো পরিস্কার অর্থে বললে সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থ পাচার কবার সুযোগ করে দিতেই এটা করা হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, লবন, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্যকরী কৌশল না নিলেই শুধুমাত্র নিজেদের বিত্ত বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।''
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে 'কর ছাড়' এর প্রস্তাবকে আইনের পরিপন্থি অভিহিত করে তিনি বলেন, ''এই প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থ পাচারের মামলাগুলোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অর্থ পাচারকারীরা আরো উৎসাহিত হবে, টাকা আরো পাটার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। এটা অন্যায়, অপরিনামদর্শী ও আত্মঘাতি পদক্ষেপ। যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত সেখানে পাচারকারীদের উতসাহিত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক। গত ১৪ বছরে সরকারের ঘনিষ্ট লোকজনই বিপুল পরিমান অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। এখন এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার ওইসব পাচারকারীদের অবৈধ অর্থ বৈধ কতরার ঢালাও সুযোগ দিলো যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যেকোনো মানদন্ডে অগ্রহনযোগ্য। আমরা পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।"
একই সঙ্গে 'অবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ''এই বাজেট হচ্ছে অব দ্যা বিজনেস ম্যান, বাই দ্যা বিজসেন ম্যান এবং ফর দ্যা বিজনেস ম্যান। অর্থাত এটি ব্যবসায়ী বান্ধব বাজেট। জনকল্যাণের কোনো কথা এতে স্থান পায়নি। মুল্যস্ফীতিতে জনমানুষের যখন নাভিশ্বাস, তাদেরকে স্বস্তি দেয়ার কোনো নেই। করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্তরা। বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলত: মধ্য বিত্তরাই।"
''মেডিটেশনের উপরও ৫% কর আরোপ করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামন্য কিছু চাল বিক্রি হতো তার দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিলো ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুই দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিখাতে ব্যয় বরাদ্ধ যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ''এটি একান্তই রেগুলেটরি ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বিষয়। অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি এখতিয়ারে হাত দিতে পারেন না। অথচ দুষ্ট চক্রের কবলে বন্দি ব্যাংক খাত নিয়ে অর্থ মন্ত্রীর কোনো কথা বাজেট বক্তৃতায় বলেনি। মুদ্রাস্ফীতির কথা স্বীকার করলেও মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নেই।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''বলা হচ্ছে, দুই বছরে করোনার প্রেক্ষিতে লক্ষ হাজার টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিলো। আমাদের প্রশ্ন সে টাকা গেল কৈই? তার মধ্যে একটা টাকাও কী পরিশোধ হয়েছে, জনগন জানতে চায়। শুনি রফতানি নাকি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেনো? কারা কারা প্রণোদনা পেয়েছে এবং এই পর্যন্ত কি পরিমান টাকা পরিশোধ করেছে তার উপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগন।"
সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ''প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্ধ সবই গতানুগতিক। করোনাকালে এই খাতে যেসব দূর্বলতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো পুরণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ বাজেটে দিক নির্দেশনা নেই। করোনাকালে সরকারের মন্ত্রীরা যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছিলেন, বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। আমরা মনে করি, বাজেটে স্বাস্থ্য সেক্টারকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেক্টারে বরাদ্ধ কমেছে। গতবছরে বরাদ্ধ ছিলো ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। আর এই বছরে বাজেটে দেখানো হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সামনের অর্থ বছরে বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। যেটা আসলে সঠিক নয়। কারণ ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার মধ্যে করোনা মোকাবিলার জন্য রাখা হয়েছিলো ৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে ৫ কোটি বাদ দিলে দেখা যাবে যে, প্রকৃতপক্ষে ৩১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা জনগনের সাথে প্রতারণা।"
সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ''এই মুহুর্তে বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি কাজ করছে না বাংলাদেশে। এখন কাজ করছে আওয়ামী ইকোনমিক মডেল, তাদেরকে উপকার করার জন্য, তাদের দুর্নীতির জন্য, তাদের পকেটে টাকা নেয়ার জন্য, তারা রাষ্ট্রের প্রেট্টোনাইজেশনের ব্যবসা করার জন্য। এভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিটা চলছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে একটা রোখ ইকোনমি প্রসেস মডেল চলছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকাগুলো নিচ্ছে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে। এই টাকাগুলো থেকে তারা(ক্ষমতাসীনরা) কীভাবে সুবিধা নেবে তাকে মাথায় রেখে একটা অর্থনৈতিক মডেল তারা তৈরি করেছে সেই মডেলের ভিত্তিতে আজকের বাজেটটা তৈরি করা হয়েছে।"
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও নাসের রহমান উপস্থিত ছিলেন।