প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ জনগণের নয় লুটেরাদের জন্য : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ১০ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
‘পাচার করা অর্থ ফেরাতে দায়মুক্তিই প্রমাণ করে প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদে উত্থাপিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বাজেট কাদের সাহায্য করেছে? যারা টাকা চুরি করল, ডাকাতি করল, লুন্ঠন করল এবং লুন্ঠন করে বিদেশে টাকা পাচার করল পি কে হালদারের মতো লোকদের। তারা এখন ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিলে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনতে পারবে এবং এর বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। তাদের দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) ধরবে না, হাইকোর্ট থেকেও তাদের কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।’
‘তাহলে আমি কী বলব? যারা এই বাজেট দিয়েছে তারা কী সাধারণ মানুষের সরকার, এটা কী সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট? যারা লুটেরা, চোর-ডাকাত- এটা তাদের সরকার। আজকে এরা (সরকার) মানুষের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করে, এদেশের অর্থনীতিকে, এদেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেট ঘোষণার পর দিন মহানগর বিএনপি দক্ষিণ-উত্তরের যৌথ উদ্যোগে গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই সরকার একটা অনির্বাচিত সরকার। জনগণের বাজেট দেয়ার তাদের কোনো এখতিয়ার নাই। তাদের গত ১৪-১৫ বছরের যে দুঃশাসন, এই দুঃশাসনে তারা প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের মানুষের শত্রু, এরা এখন জনগণের শত্রু। আমি যদি বলি এরা এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।’
‘আওয়ামী লীগ, এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাজেট নিয়ে আমরা অতকিছু বুঝি না। সাধারণ মানুষ আমরা দেখি যে, কোন জিনিসের দাম বাড়ল, কোন জিনিসের দাম কমল। বাসভাড়া বাড়ল কি না। আজকে বাসে ওঠেন বাসের ভাড়া বেড়ে গেছে। গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে চুলার খরচ বেড়ে গেছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে সারের দাম বৃদ্ধি পাবে, প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়বে। এদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এতটুকু বৃদ্ধি পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে দেখবেন সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কোথায় দেয়া হয়েছে- জনপ্রশাসনে। জনপ্রশাসন কি? জনপ্রশাসন হচ্ছে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি-ইউএনও। সেক্রেটারি-টেক্রেটারি- এরা যারা বসে আছেন সচিবালয়ে। ওদের বেতন বাড়াচ্ছে, ওদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে আর তাদের জন্য জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে তাদের এটা (বেতন-ভাতা) বাড়াচ্ছে।
‘মানুষের জন্য এদের কোনো ভালোবাসা নেই। তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কী করে অর্থ সাশ্রয় হতে পারে তার জন্য তারা কাজ করত। আজকে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ফলে কী হয়েছে? শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জন হচ্ছে দরিদ্র। সেই মানুষের জন্য এই বাজেটে বলেন বা আগের বাজেটগুলোতে বলেন কখনো আওয়ামী লীগ কিছুই করে নাই। এক কোটি লোককে তারা নাকি সহযোগিতা দেবে। সেই ১ কোটি লোক কোনো ছিটা-ফুটোও পায় না ওখান থেকে আবার আওয়ামী লীগ ভাগ বসায়।’
‘পদ্মা সেতু দিয়ে স্বর্গে যাওয়া’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) বলে উন্নয়ন, এত উন্নয়ন যে সোনা দিয়ে সব মুড়ে দিচ্ছে। আমাদের রুমিন ফারহানা গতকাল খুব ভালো বলেছেন যে, পদ্মা ব্রিজ হচ্ছে গোল্ডেন ব্রিজ। সোনা দিয়ে মোড়াই করা একটা ব্রিজ বানাইছে।’
‘পাকিস্তান আমলে আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, ছাত্র আন্দোলন করতাম, রাজপথে সেøাগান দিতাম, তখন বিভিন্নভাবে স্লোগান দিতাম। তার মধ্যে একটা সেøাগান ছিল, গান-টান গাইতাম, কীর্তনও গাইতাম। ওর মধ্যে একটা সেøাগান ছিল ১০ টাকা তেলের দাম বাড়লেই তখন বলতাম- ‘১০ টাকার তেল খেয়ে স্বর্গে যাব।’ এখন বলতে চাই, ‘বিভিন্ন টোল দিয়ে আমরা পদ্মা ব্রিজ দিয়ে স্বর্গে যাব।’
তিনি বলেন, ‘কার টাকায় আপনারা পদ্মা ব্রিজ বানিয়েছেন? জনগণের টাকায়। জনগণের পকেট কেটে ট্যাক্স নিচ্ছেন। ভ্যাট, ট্যাক্স, অমুক ট্যাক্সের নামে মানুষের কাছ থেকে সব টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। আর কী করছেন? ঋণ নিয়েছেন। সেই ঋণের বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে বইতে হবে। সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছেন। আমরা জানতে চেয়েছি, বাকি টাকাগুলো আপনারা কিভাবে খরচ করলেন?’
‘খবর নিয়ে দেখবেন তার বেশিরভাগ টাকাই তাদের পকেটে গেছে। একটা লোকও বাকি নেই- সবগুলো টাকা চুরি করে তাদের পকেট ভারী করেছে, ব্যাংকে ভরেছে আর বিদেশে পাচার করেছে। এ জন্য সিঙ্গাপুরে যদি যান দেখবেন যে, বড় বড় শপিংমল তৈরি হচ্ছে, বাড়ি তৈরি হচ্ছে। কারা মালিক ? বাংলাদেশি লোকেরাই মালিক। কানাডায় যান ওখানে একটা বেগমপাড়া তৈরি হয়ে গেছে, মালয়েশিয়াতে যান সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে কারা? আওয়ামী লীগ, তাদের নেতা-মন্ত্রীরা, তাদের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা। এই লোকগুলোকে বড় লোক করার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করি নাই, এই লোকগুলোকে চুরি-চামারি-লুন্ঠন করার জন্য আমরা আমাদের রক্ত দেইনি। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য।’
‘ফয়সালা রাজপথে’ :
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আর সময় ক্ষেপণের সময় নেই। আমাদের খুব পরিষ্কার কথা- পদত্যাগ করুন এই মুহূর্তে এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংসদ বাতিল করে দেন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে জনগণের কাছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করে নতুন সরকার গঠন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
‘অন্যথায় ইতিহাস যে কথা বলে যে, পালাবারও পথ খুঁজে পাবেন না। বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিন ফ্যাসিবাদী শক্তিকে সহ্য করে নাই, এখনো করবে না। আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক আওয়াজ তুলি, আমাদের নেতা যে আওয়াজ দিয়েছেন- ‘ফয়সালা হবে কোন পথে, রাজপথে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, দেশকে গণতান্ত্রিক করার স্বার্থে, এই দ্রব্যমূল্য কমানোর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই সেই গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আওয়ামী লীগকে যখন মিছিল-মিটিং করতে দেবেন তাহলে আমাদেরও মিছিল-মিটিং করতে দিতে হবে। আর যদি সেখানে বাধার সৃষ্টি করেন তাহলে জনগণই সেই বাধা প্রতিহত করবে।’
‘আপনারা (পুলিশ বাহিনী) মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করবেন না, বিনা কারণে মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে অত্যাচার করবেন না, রিমান্ডে নেবেন না। এগুলোর একদিন না একদিন আপনাদের জবাবদিহি করতেই হবে।’
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, তাবিথ আউয়াল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের মামুন হাসান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলীসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।