ক্ষমতাপাগল সরকারকে মোদিও রক্ষা করতে পারবে না : চরমোনাই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৯ পিএম, ১০ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৫ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতার পাগল। ক্ষমতার নেশায় ভারতের বিরুদ্ধে আপনারা নিন্দা প্রস্তাব আনছেন না। আপনারা যতোই ভাবেন মোদি আপনাদের ক্ষমতা-গদি রক্ষা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমতায় রাখবে না।
ভারতে বিজেপি মুখপাত্র কর্তৃক রাসূল (সা.) এবং উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জুমা আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ মিছিলের। সেখানে মিছিল উত্তর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ উত্তর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, চলতি জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকে যদি এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব পাস করা না হয়, ভারতীয় হাইকমিশনারকে যদি ডেকে নিন্দা জানানো ও জবাব চাওয়া না হয়, কটূক্তিকারীদের যদি বিচার করা না হয়, তাহলে আগামী ১৬ জুন ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি দেয়া হবে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম কটূক্তিকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের নবী শুধু আরব নয়, গোটা বিশ্বের জন্য রহমত। তার সম্পর্কে কটূক্তি করতে সাহস তুমি কোথায় পেলে! যেখানে আবু লাহাব, আবু জেহেলও সে সাহস করেনি।
নবীর প্রতি অন্যায় নির্যাতনের পরও বিশ্বনবী কোনো প্রতিবাদ করেননি উল্লেখ করে এ ইসলামী নেতা বলেন, নবীর পথে কাঁটা বিছানো হয়েছিল। রক্তাক্ত হয়েছেন, কিন্তু তিনি তাদের জন্য বদদোয়া করেননি, বরং হেদায়েতের জন্য দোয়া করেছেন। আমার নবীর সম্মান, ইজ্জত রক্ষায় জীবন দিতে পারি। নবীর ইজ্জত রক্ষায় আমরা স্ত্রী, সন্তান ত্যাগ করতে পারি, ঘর ত্যাগ করতে পারি।
তিনি বলেন, বেঈমানরা তোমরা যদি আমার নবীকে আঙুল উঁচিয়ে চরিত্র হনন করো, তাহলে সেই আঙুল কেটে ফেলা হবে, যে চক্ষু রাঙ্গিয়ে কথা বলেছো সেই চোখ উপড়ে ফেলা হবে, যে জিহবা দিয়ে কটূক্তি করেছো সেই জিহবা ছিঁড়ে ফেলা হবে।
মুফতি চরমোনাই আরও বলেন, ভারতে কোনো আদালত নাই, ওইটা মোদির অফিস। মসজিদে নাকি শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। সেটা আবার কোর্ট কীভাবে নির্দেশ দেয়, মসজিদের ভেতরে শিবলিঙ্গ খোঁজার জন্য। ভারতে যারা মুসলমান তারা সেখানেই জন্মগ্রহণ করেছে। অন্য ধর্মের যারা, যাদের ভাসিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু মুসলমানদের ভারতেই সমাধি হয়। মুসলমান শাসক ভারতে ছিল কিন্তু কোনো মন্দির ভাঙা হয়নি। সাড়ে সাতশ বছর মুসলমানরা শাসন করেছে, কিন্তু কোনো অমুসলিমদের ওপর নির্যাতন-উৎখাত করেনি।
পানিপথের যুদ্ধের পর সাড়ে ৭২ মণ পৈতা উদ্ধার করা হয়েছিল উল্লেখ করে পীর চরমোনাই বলেন, কী পরিমাণ হিন্দু সেসময় মৃত্যু হয়েছিল সেটা বিবেচনা করে বলা হয়। রাসূলের শরীরে যতো আঘাত ছিল সব ছিল সামনে। কারণ রাসূল (সা.) সামনে থেকে যুদ্ধ করেছেন, পেছন থেকে নয়। বেঈমানরাই পেছন থেকে যুদ্ধ করে। মুসলমানরা কখনো পেছন থেকে লড়াই করে না। কিন্তু যুদ্ধ করতে এলে মুসলমান ছেড়ে কথা বলে না। কাপুরুষের মতো ঘরে বসে মৃত্যুবরণ করে না।
বর্তমান সরকারকে মোদি সরকার রক্ষা করতে পারবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আশায়-নেশায় আপনারা নিন্দা প্রস্তাব সংসদে আনলেন না। মনে রাখবেন মোদি সরকার আপনাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না, রক্ষা করতে পারবে না। মোদি আপনাদের কামান, বুলেট, যুদ্ধ বিমান দিয়েও রক্ষা করতে পারবে না, কারণ জনগণ ক্ষেপলে কোনো কিছু দিয়েই ক্ষমতা টেকানো যাবে না। জনগণ জাগ্রত হলে কোনো পরাশক্তির শক্তি কাজে আসে না। আজ বাংলাদেশের জনগণ জাগ্রত হয়েছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সংসদ চলছে, আপনি রাষ্ট্রদূতকে ডাকেন, নিন্দা প্রস্তাব পাস করেন। জবাব চান। যদি আপনি ব্যর্থ হন তাহলে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাকে সংসদ থেকে টেনে নামানোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। কারণ আপনি ক্ষমতার পাগল, আর আমরা নবী, সুন্নত, ইসলামের পাগল।
মুসলমানদের উৎখাত করার যে ষড়যন্ত্র মোদি সরকার করছেন, সেখান থেকে পিছু হটেন, যদি সেটা না করেন, পুরো বিশ্বের মুসলমান একত্রিত হয়ে আপনার পা ভেঙে ফেলবে।
সমাবেশে দলটির মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ও দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলমও বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেয় পুলিশ। তবে সমাবেশ ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। মিছিলকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার দলীয় নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া এ দলটির বাইরেও সমমনা বেশকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতেও দেখা যায়।