ঢাউস বাজেটে চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী
লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বাজেট জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৪ পিএম, ৯ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩০ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
জাতীয় অর্থবছর ২০২২-২০২৩-এর অনুমোদিত বাজেটকে লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বাজেট বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। তাই এ বাজেট জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা এর আগেও বাজেট নিয়ে কথা বলেছি, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। এটা কার বাজেট? কারা এই বাজেট করছে? যারা আজকে বাজেট ঘোষণা করছে তারাতো জনগণের প্রতিনিধি নয়। বাজেট ঘোষণা করার কোনো অধিকারতো তাদের নেই। সরকার বাজেট তৈরি করছেন নিজেদের লুটপাটের জন্য। ভবিষ্যতে কিভাবে আরো লুটপাট করবে তারা এই হিসাব করে। তাই এবারের বাজেট আমাদের কাছে কোনো গুরুত্ব পায়নি। বাজেট আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ বাজেট লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বাজেট। বাজেট হচ্ছে লুটেরাদের যাতে আরও লুট করতে পারে, নিজের সম্পদ বাড়ানোর বাজেট।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট। জন প্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মূল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে। অবাক হবার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
১. বাজেটের আকার বেড়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু এই ঢাউস বাজেটের যে দিকটি সরাসরি দেখা যায় না সেটা হচ্ছে, অবাধ মুদ্রা সরবরাহের বিষয়টি। কেউ জানে না, বাংলাদেশ ব্যাংক কত নতুন নতুন নোট ছাপিয়ে বাজার ছয়লাব করে দিচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে জনগণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ইনফ্লেশন সরকারি হিসেবে ৬ শতাংশের কিছু ওপরে কিন্তু বাস্তবে সেটা ১২ শতাংশ, অর্থাৎ সরকারি হিসেবের দ্বিগুণ। বর্তমান বছরের বাজেটের ফলে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে তার কোনো সমাধান নেই।
২. বাজেট ঘাটতি বিষয়টি লক্ষ্য করুন। ৩৬%, অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ফলে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিষয়টি নাই বা ব্যখ্যা করলাম। এর চাপও কিন্তু দরিদ্র জনগণের ওপরেই পড়বে।
৩. নতুন ট্যাক্স আরোপের বিষয়টি লক্ষ্য করুন। কর্পোরেট ট্যাক্স কমেছে, কিন্তু ট্যাক্স ফ্রী তিন লক্ষ টাকার সীমা এক টাকাও বাড়েনি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
৪. দরিদ্র দেশের একটি বাজেটের মৌলিক দিক হল উন্নয়ন বাজেট বনাম রাজস্ব বাজেটের অনুপাত। আমরা দেখছি, একদিকে উন্নয়ন বাজেটের সিংহ ভাগ নিয়েছে ভৌত অবকাঠামোর মেগা প্রজেক্টগুলো। সাথে সাথে আশংকা হচ্ছে মেগা দুর্নীতির। কাজেই অধিকতর ব্যাখ্যায় না যাওয়াই হয়তো উত্তম। পাশাপাশি অনুন্নয়ন ব্যয় অথবা এখন যাকে অন্য নামে বলা হয় পরিচালনা ব্যয়, তার পরিমাণ ৪ লক্ষ কোটির ওপর। রাজনৈতিক সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রশাসন ও সাপোর্ট সিস্টেমকে খুশি রাখতে হবে তো !
৫. বাজেটে বিরাট অংকের ভর্তুকি। লক্ষ কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো কার পকেটে যায়? আমরা অতীতে দেখেছি, কিভাবে একই টেলিফোন নাম্বারে কতবার প্রণোদনা যায়, কার কাছে যায়! এগুলো এখন মানুষের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসবে, বিগত দুই বছরে যে লক্ষ হাজার কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল সে টাকা গেল কই? তার মধ্যে একটি টাকাও কি পরিশোধ করা হয়েছে? জনগণ জানতে চায়। শুনি, রফতানি না কি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে ও কি পরিমাণ পরিশোধ করেছে, তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ। বক্তব্য এ পর্যায়ে দীর্ঘ করব না। বিস্তৃত আলোচনা যথাসময় হবে। এক কথায় বলতে হয়, এ বাজেট জনগণের জন্য নয়, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ একটি বাস্তবতা বর্জিত বাজেট, কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাজেটের অর্ধেকের চেয়ে বেশি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়ে যায়। বাজেট বাস্তবায়ন না করার কারণে টাকা জনগণের কাছে যাচ্ছে না। অথচ জীবনযাত্রায় তাদের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এই বাজেটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লুটপাট করবে। মানুষ চারদিকে আক্রান্ত হবে। দিন শেষে জনগণের কাছ থেকেই টাকা নিতে হবে। মূল সমস্যা হচ্ছে-রাষ্ট্রীয় তহবিলে যে টাকা থাকার কথা ছিল তা নেই বলে বাজেট বাস্তবায়ন করতে গেলে জনগণের ওপর আরো চাপ বাড়বে। জাতীয় অর্থবছর ২০২২-২০২৩ প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান বলে লাভ নেই মন্তব্য করে আমির খসরু বলেন, বাজেট নিয়ে বলতে ইচ্ছা নেই, মনমানসিকতাও নেই। তারপরও বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। তাই দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলে। তবে অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পাচ্ছি না। দেশে মেগা প্রকল্পের নামে যে ধরনের লুটপাট করা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের বাজেটের মাধ্যমে জনগণ আরো চাপের মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, যে বৃহত্তর বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য মূলত কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে। একদিকে বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধে সরকার যেভাবে দেশের মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, অন্যদিকে দেশে যেভাবে লুটপাট দুর্নীতি চলছে, যেভাবে বাজেটের একটি বড় অংশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। যারা ইতিমধ্যে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারাই আবার বাজেটের মাধ্যমে বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। যা বাংলাদেশের সংবিধান, নীতিনৈতিকতা ও আইনের পরিপন্থী। মূলত অনির্বাচিত অবৈধ ও দখলদার সরকার হলে যে, কতকিছু করা যায় তার বড় প্রমাণ এই বাজেট।