লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বাজেট আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৪ পিএম, ৯ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:২৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জাতীয় অর্থবছর ২০২২-২০২৩-এর অনুমোদিত বাজেটকে লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বাজেট বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। তাই বাজেট তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাজেট আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ বাজেট লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বাজেট। বাজেট হচ্ছে লুটেরাদের যাতে আরও লুট করতে পারে, নিজের সম্পদ বাড়ানোর বাজেট।
আজ বৃহস্পতিবার জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উলপক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই লুটেরা, দুর্বৃত্ত সরকারের বাজেট মানেই টাকা লুট। আরও টাকা লুট করা। তাই বাজেট নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।
বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে ন্যায়বিচার পাননি। বিচারিক সন্ত্রাসের কারণে তিনি আজ গৃহে অন্তরীণ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। দলীয় তদন্ত কর্মকর্তা দিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। একটা মামলায় তারেক রহমান খালাস পেলেন। যে বিচারক খালাস দিলেন, তাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এই বিচারব্যবস্থা নিয়ে আমরা কী করতে পারি?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেল, সংবিধান শেষ হয়ে গেল, এর জন্য দায়ী কিন্তু বিচার বিভাগের বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তার কারণে জাতি আজ ধ্বংসের দিকে। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেল, তখন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, এই জাতিকে অনিন্ডয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হলো। আজ সমস্ত মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আজ মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেন না।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পদ্মা সেতু হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা বলছেন, আমি, আমরা তৈরি করেছি। কেন করেছেন? কেন করতে হয়েছে? কারণ, আপনারা চুরি করতে গিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক টাকা দেবে বলেছিল। কিন্তু সেই বিশ্বব্যাংক আপনাদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিল কেন? ঘটনা তো সত্য। মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হয়েছিল। এটাই বাস্তবতা। প্রতিটি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে এবং এই পদ্মা সেতুর প্রথম ফিজিবিলিটি বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০০৫ সালে জাপান সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পদ্মা সেতুর ফান্ডিংয়ের (অর্থায়ন) ব্যাপারে তিনি (খালেদা জিয়া) কথা বলেছিলেন। পদ্মা সেতুর ভূমি অধিগ্রহণও বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলে হয়েছিল।
এখন কেউ কথা বলতে সাহস পায় না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেক মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। একেই বলে সত্যিকারের ফ্যাসিজম। কিছুদিন আগেও অনেক শ্রদ্ধাভাজন মানুষ টক শোতে কথা বলতেন। পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। এখন কিন্তু কেউ কথা বলছেন না। এখন জীবনের নিরাপত্তা নেই। পাকিস্তান মিলিটারি শাসনের দেশ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, পাকিস্তানের বিচার বিভাগ কত শক্তিশালী, তাদের আইনজীবীরা শক্তিশালী। আর বিচার বিভাগ এতই শক্তিশালী যে, তারা সরকার পরিবর্তন করে দিতে পারে। পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় আইনজীবীদের রিমান্ডে নেয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, একজন আইনজীবীকে যদি রিমান্ডে যেতে হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব? কোথায় বিচার পাব? এটা কীভাবে সম্ভব? আওয়ামী লীগ বিচার ব্যবস্থাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, কোনো মানুষের বিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, ইকবাল হোসেন, আইনজীবী বোরহান উদ্দিন, আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর বিএনপি : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা এর আগেও বাজেট নিয়ে কথা বলেছি, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। এটা কার বাজেট? কারা এই বাজেট করছে? যারা আজকে বাজেট ঘোষণা করছে তারাতো জনগণের প্রতিনিধি নয়। বাজেট ঘোষণা করার কোনো অধিকারতো তাদের নেই। সরকার বাজেট তৈরি করছেন নিজেদের লুটপাটের জন্য। ভবিষ্যতে কিভাবে আরো লুটপাট করবে তারা এই হিসাব করে। তাই এবারের বাজেট আমাদের কাছে কোনো গুরুত্ব পায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কাফরুল থানার ৪টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অসুস্থ এস এ খালেককে দেখতে তারা বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত খারাপ সময় অতিবাহিত করছি। এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য একটি খারাপ সময় যাচ্ছে। এখন যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে তারা দেশের মানুষের সকল অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা এই দেশে একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো আমাদের এই দেশকে বাঁচাতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা কোনো পরিবার, দল বা গোষ্ঠীর জন্য যুদ্ধ করিনি। আমরা এই দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আমাদের দুর্ভাগ্য, আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। আজকে দেখেন এস এ খালেক সাহেবের বাসায় এসে আপনাদের সম্মেলন করতে হয়েছে। কেন আজকে আমরা বড় একটা টাউন হলে প্রোগ্রাম করতে পারছি না। কারণ পুলিশ আমাদের প্রোগ্রাম করতে দিতে চায় না। সরকারী গুন্ডারা, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা আমাদের প্রোগ্রামে বাধা দেয়। এটাতো হওয়ার কথা না। তাদের যে অধিকার, আমাদেরওতো সেই অধিকার রয়েছে। এই দেশটাতো সকলের। আওয়ামী লীগ যতোদিন ক্ষমতায় থাকবে দেশ ততোদিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার উন্নয়ন উন্নয়ন বলে পাগল হয়ে যাচ্ছে। আরে উন্নয়নটা কোথায়? তারা অবকাঠামো বানাচ্ছে আর নিজের পকেট ভরছে। শতকরা ৪২ ভাগ লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। একটা মানুষ আজকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পায় না। বেশি টাকা না থাকলে মানুষ হাসপাতালে যেতে পারে না। আর সরকারি হাসপাতালে গেলেতো কোনো চিকিৎসাই পাওয়া যায় না। আজকে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। শিক্ষার অবস্থা এতোটাই নিচে নেমে গেছে যে, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়, কলেজ থেকে যারা বের হয় তারা বাইরে কোথাও জায়গা পায় না। সাধারণ মানুষের জন্য এই সরকার কোনো কাজ করে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সারাদেশে সম্মেলন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করার লক্ষ্য একটাই, এদেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা গণতান্ত্রিকভাবে সংগ্রাম করবো, লড়াই করবো। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আবার আমরা এই দেশটাকে স্বাধীন করবো। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। আপনাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আজকে এই সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির জন্য নয়। এটা দেশকে রক্ষা করার জন্য। ১৯৭১ সালে আমরা যে সংগ্রাম করেছিলাম সেই একইভাবে এই দেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের আবার যুদ্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধে আমাদের জয়লাভ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা কোথাও সংগঠিত হতে গেলেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বুধবার ঢাকা বারে দুই জন উকিলকে গ্রেফতার করে তাদেরকে রিমান্ডে দিয়েছে। কোন জায়গায় আছি আমরা যে, একজন উকিলকেও রিমান্ডে নেয়া হয়। আজকে আমাদের কোনো পথ নেই, কোনো বিকল্প নেই, আমরা যদি বাঁচতে চাই, দেশকে বাঁচাতে চাই এর জন্য একটাই পথ আন্দোলন আর আন্দোলন। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, দারুসসালাম থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এ সিদ্দিক সাজু প্রমুখ। এস এ খালেকের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেয়ার সময় বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, নির্বাহী কমিটি সদস্য সাঈদ সোহরাব, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।