জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সৎ, ধার্মিক ও বিনয়ী রাষ্ট্রনায়ক : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২০ পিএম, ৭ জুন,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সৎ, ধার্মিক ও বিনয়ী রাষ্ট্রনায়ক। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ছিলেন শতভাগ দেশপ্রমিক। তাঁর চরম নিন্দুকেরাও তাঁর সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে আজও কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে নাই।
আজ মঙ্গলবার (৭ জুন) রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার জন্য নিজ নামে জেড ফোর্স গঠন করেন। ১৯৭৫ সালে মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাকশাল কায়েম করে শেখ মুজিবুর রহমান। জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। গণমাধ্যমের ওপর থেকে সকল কালাকানুন প্রত্যাহার করে নেন। জিয়াউর রহমান যোগ্যতা, মেধা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে জাতি তাঁর অবদান আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। শহীদ জিয়া আগাগোড়াই ছিলেন একজন সৎ, কর্মদক্ষ, ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রনায়ক। সততার মাপকাঠিতে তিনি আজও অনন্য ও অদ্বিতীয়। তিনি দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের প্রতিটিকে স্বনির্ভর করেছিলেন। সে লক্ষ্যে স্বনির্ভর আন্দোলনের সাথে কৃষি, সেচ, বৃক্ষরোপণ, গৃহনির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, স্বাস্থ্যরক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা এবং আইনশৃংখলা ব্যবস্থাকে সম্পৃক্ত করেছিলেন।
তিনি বলেন, যুব সমাজকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য ১৯৭৮ সালে তিনি দেশে প্রথমবারের মতো যুব মন্ত্রণালয় চালু করেন। জেলায় জেলায় চালু করেন যুব কমপ্লেক্স। শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য তিনি ১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া বহিঃর্বিশ্বে দেশের অপ্রচলিত গার্মেন্টস, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্প, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করেন। জিয়ার হাত ধরে গড়ে ওঠা সেদিনের গার্মেন্টস শিল্প আজ দেশের প্রধান রফতানি খাত। শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করে সহজেই বিশ্বসবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শহীদ জিয়ার ভূমিকা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনিই মূলত মুসলিম বিশ্বে শ্রমবাজার সৃষ্টি করে সরকারিভাবে কর্মী প্রেরণ করেন।
শহীদ জিয়া কর্তৃক প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে’র ধারণাটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে। তিনি তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে দেশের অর্থনীতিকে একটি মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সৎ, ধার্মিক ও বিনয়ী রাষ্ট্রনায়ক। কোনো প্রকার অসততা ও স্বজনপ্রীতি তাঁকে স্পর্শ করেনি। ন্যায্যতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ছিলেন আপোসহীন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ছিলেন শতভাগ দেশপ্রমিক। তাঁর চরম নিন্দুকেরাও তাঁর সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে আজও কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে নাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি যখন জন-জীবনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে সেই সময় গ্যাসের ২২ দশমিক ৭৮ মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে আঘাত করল। একদিকে মানুষের দৈনিন্দন জীবনের ব্যয় বৃদ্ধি অন্যদিকে কৃষি, শিল্প ও বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য আরো বৃদ্ধি পাবে।। কোনো মতেই জনগণের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হবে না। অবিলম্বে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে পূর্বের মূল্যে ফিরে যাওয়ার দাবি করছি। সীতাকুন্ডের বিস্ফোরণ ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণে প্রায় ৫০-এর অধিক মানুষ নিহত হওয়া এবং প্রায় ২ শতাধিক মানুষ মারাত্মকভাবে দগ্ধ ও আহত হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য সরকারের অবহেলা, সমন্বয়হীনতা এবং অযোগ্যতা দায়ী। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি, অযোগ্যতা, জবাবদিহিহীনতার কারণেই এতগুলো প্রাণ চলে গেলো এবং সামগ্রিক ক্ষতি হলো।
যুবদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ দস্যুতে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষ আজকে খেতে পারে না অথচ আওয়ামী লীগের লোকেরা টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এরা ক্ষমতায় থাকলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। তাই আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরচারী সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করি। হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন। গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।
সভাপতির বক্তব্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে’র ধারণাটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে। তিনি তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে দেশের অর্থনীতিকে একটি মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সৎ, ধার্মিক ও বিনয়ী রাষ্ট্রনায়ক। কোনো প্রকার অসততা ও স্বজনপ্রীতি তাঁকে স্পর্শ করেনি। জিয়াউর রহমান সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। আর জিয়াউর রহমান বাকশাল বন্ধ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহীনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।