ক্ষমতাসীনরা সমালোচনা করে জিয়ার ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবে না - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৫ পিএম, ২৯ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ক্ষমতাসীনরা যত সমালোচনাই করুক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে কখনো মুছে ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। দলের প্রতিষ্ঠাতার এই দিনটি বিএনপি শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে। ৪১তম এই শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ১০ দিনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে তা শুরু হলো। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী সদস্যের গুলিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ঢাকার বাইরে যাচ্ছি, আমরা বিভিন্ন জেলাতে সম্মেলন করতে যাচ্ছি- আমরা দেখছি মানুষের কী আকুতি, কী আবেগ। কালকে যখন আমি যশোর থেকে ঝিনাইদহ যাচ্ছি-পথে পথে মানুষ চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ সেই পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে চায় যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আজকে জিয়াউর রহমান সাহেবকে যে যত ইচ্ছা বলুক, তাকে খলনায়ক বলুক, পাকিস্তানি চর বলুক আর তাকে সামরিক জান্তা থেকে উঠে আসার কথা বলুক তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না। কারণ এই দেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে তিনি প্রোথিত হয়ে গেছেন। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে, তাকে কখনো মুছে ফেলা যাবে না।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হচ্ছেন আমাদের সেই আলোকবর্তিকা, যার দিকে তাকিয়ে আমরা কথা বলব। তার তো ব্যর্থতা নেই। তিনি শহীদ হয়ে গেছেন। কিন্তু তার আদর্শ তো ফুরিয়ে যায়নি। তিনি যে দর্শন দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন আমাদের উন্নয়নের রাজনীতি, তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন যে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনোদিন আমরা আপস করব না, সেই রাজনীতি তো টিকে আছে। শুধু টিকে নাই চেষ্টা করেছিল। সেখানে আবার আমাদের আরেকজন নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কথাটা আমার প্রায় মনে হয় যে, তিনি যদি সেই পতাকাটা হাতে তুলে নিয়েছিলেন যেই পতাকা শহীদ জিয়ার পতাকা ছিল-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র আর উন্নয়নের পতাকা ছিল। ওই পতাকা নিয়ে দেশনেত্রী ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন, দীর্ঘ সংগ্রাম। রাস্তায়, পথে-প্রান্তরে, আমাদের এই নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন এবং সফল হয়েছেন। ১৯৯০ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
তারেক রহমান সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আবার যখন আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট আমাদের দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে গেছে, আমাদের সব কিছু উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হয়ে যাচ্ছে তখন আবার আমাদের সামনে এসে আবির্ভূত হয়েছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমান, যিনি আমাদেরকে সুদূর থেকে পথের দিশা দিচ্ছেন, আমরা পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল না পরশু প্রশ্ন তুলেছেন যে, উনি সেই টেইমস নদীর পার থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন- এটা কী সম্ভব হবে? ওবায়দুল কাদের সাহেব অবশ্যই সম্ভব হবে, অবশ্যই সম্ভব হবে। কারণ তারেক রহমান সাহেব যেই রাজনীতি ধারণ করেছেন সেই রাজনীতি সারাদেশের মানুষের রাজনীতি। এখন মানুষ যা চায়, এখন মানুষ যে মুক্তি চায়, এখন মানুষ যে তার হারানো অধিকার ফিরে পেতে চায়, এখন মানুষ যে একটা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চায়, এই হত্যা-ধর্ষণ-খুন-জখমের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তখন ওই দর্শন, জিয়াউর রহমানের দর্শন ধারণ যা তারেক রহমান সাহেব ধারণ করে আছেন সেটা অবশ্যই এখানে সফল হবে। তা না হলে এই যে আমাদের ছাত্রদলের ছেলেরা প্রায় ৩৫ জন হাসপাতালে পড়ে আছেন? কেন আছেন তারা? কী পাচ্ছেন তারা, কী পাচ্ছে? একটা আদর্শ, তারা যেটা বিশ্বাস করে- যে আমাদের এদেশকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে এখান থেকে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’-বলেন বিএনপি মহাসচিব।
জিয়াউর রহমান জীবনের সবচেয়ে বড় দুটি দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা হচ্ছে যে, জিয়াউর রহমান জাতির সবচেয়ে দুঃসময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে যে, তিনি ১৯৭৫ সালে যখন জাতি প্রায় দিশেহারা-কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না তখন আবার তিনি ওই সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফেইস করে, চ্যালেঞ্জ করে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই দুটার মধ্য দিয়ে তিনি পরিচিত যে, আমরা বাংলাদেশী, আমাদের এই ভূখন্ডে আমাদের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি আছে- সেটাই তিনি দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা। যেখানেই যেতেন উৎসাহ দিতেন, উদ্দীপনা দিতেন-একটা আম গাছ লাগাও, নিজেকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করো। নিজে খাল কাটতেন, মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটেছেন। এটাইকে বলে পথ প্রদর্শক, এটাইকে বলে ফিলোসফার, এটাইকে বলে লীডার। তাই যে যা বলতে চেষ্টা করুক কোনো মতেই তারা শহীদ জিয়াকে মুছে ফেলতে পারবে না, বিলীন করতে পারবে না।
আওায়ামী লীগ একদিন ক্ষমতায় থাকলেও ক্ষতি এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখলাম এই যে পাচার করা অর্থ তারা নাকি ফিরিয়ে আনবে আবার। আরেক শয়তানি শুরু করবে আবার। অর্থাৎ নিজেরা এই টাকা পাচার করেছে এটাকে ফিরিয়ে এনে জায়েজ করবে। তারা দেশের সম্পদ লুট করা সম্পদ ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবারো লুটপাটের সুযোগ করে দেবে। এদেরকে কোনো মতেই বিশ্বাস করা যায় না। ওরা বরাবরই প্রতারক। এমন একটা সময় ছিল না-আওয়ামী লীগকে আপনারা দেখেননি আমরা দেখেছি। বরাবরই প্রতারণা করেছে। সেই আওয়ামী লীগকে কোনো মতেই আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। একদিন থাকলেও আমাদের ক্ষতি।
বাংলাদেশকে ‘তাঁবেদার রাষ্ট্র’ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে যারা তাকে (জিয়াউর রহমান) হত্যা করেছিল তারা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু, বাংলাদেশের মানুষের শত্রু, বাংলাদেশের যে উত্থান হয়েছিল, সেই উত্থানের শত্রু। তারাই আজকে ২০০৬ সালে ১/১১ এর থেকে সক্রিয় হয়ে উঠে আবার বাংলাদেশকে ওই একই জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। তারা বাংলাদেশের যে আইডেনটিটি, সেই আইডেনটিটিকে ধ্বংস করতে চায়। যে কথা আমাদের নেতাও বলেছেন যে, এই দেশটাকে তারা তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সেটারই এখানে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা, বাংলাদেশের শত্রুরা মনে করেছিল যে, বিএনপি শেষ। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর থেকে এই বিএনপি থাকবে না। বিএনপির রাজনীতি তো হচ্ছে এই দেশের মানুষের বুকের ভেতরের রাজনীতি, মাটির রাজনীতি। এটা বিএনপি ধারণ করে এবং সব সময় বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে এবং চতুর্দিকে আবার বিস্তার লাভ করেছে। আমার আবেদন আজকে তরুণদের কাছে, যুবকদের কাছে যে, ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তখন আমরা তরুণ ছিলাম, যুবক ছিলাম। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখন একেবারেই যুবক ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা সেই যুবকরাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম অস্ত্র হাতে। আবারো ১৯৭৫ সালে শহীদ জিয়ার ডাকেই কিন্তু আমরা রাষ্ট্রকে নির্মাণ করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আজকে দীর্ঘ ১৪ বছর হতে চললো- আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করে আছেন, অসুস্থ হয়ে আছেন। আজকে আমাদের সেই লড়াইকে ঠিক জায়গায়, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আসুন আমরা সবাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংগঠিত হই এবং আজকে এই দিনে এই শপথ গ্রহণ করি দেশমাতাকে মুক্ত করব, দেশকে মুক্ত করব এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক উদার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেন আটকিয়ে রেখেছে তার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি মাত্র কারণ যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শহীদ জিয়ার যে পতাকা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্রের যে পতাকা, সেই পতাকাকে তিনি সেই গ্রামে-গঞ্জে নিয়ে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন। সেজন্যই দেশনেত্রীকে গ্রেফতার করে আটক করে রাখা হয়েছে। আজকে অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেতে না দেয়ার সেটাই কারণ। যেন তাকে কোনো মতেই সুস্থ হয়ে আবার জনগণের সামনে আসতে দেয়া যাবে না। কারণ তিনি ধারণ করেন সেই রাজনীতি সেই পতাকা যা শহীদ জিয়াউর রহমান ধারণ করতেন যা এদেশের কোটি কোটি মানুষ ধারণ করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে একজন ‘ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে অভিহিত করে তার নেতৃত্বে ‘বিপ্লব’ সৃষ্টির নানা ঘটনাপ্রবাহও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সকল আদর্শ, সকল কর্মসূচি আওয়ামী লীগ যারা সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদের এজেন্ট তারা আজকে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে। আজকে গণতন্ত্র নাই, মানুষের অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানবাধিকার নাই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ নিষ্পেষিত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আজকে সময় এসেছে, এই সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। তারা অত্যন্ত দুর্বল। এখন দরকার একটা ধাক্কা দেয়া। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, রাজপথে ফয়সালা হবে। আজকে এই দিনে আমাদেরকে একটাই শপথ নিতে হবে, আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে এই সরকারকে হটিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব প্রমুখ।