ছাত্রলীগের এই আচরণ সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার লঙ্ঘন : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৯ পিএম, ২৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৪৯ এএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার লঙ্ঘন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গত পরশু আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সশস্ত্র সহিংস আক্রমণে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর জখম হয়। শহীদ মিনারের সামনে বেলা ১১-৩০টা থেকে দফায় দফায় ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখনও তারা শঙ্কামুক্ত নন। ছাত্রলীগের হামলায় রেহাই পায়নি ছাত্রদল নেত্রীরাও। রড, হকিস্টিক, রামদা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়েনার মতো। দুজন ছাত্রদল নেতাকে ঢাবি’র শহিদুল্লাহ হলের নির্জন কক্ষে উঠিয়ে নিয়ে এসে আবরার স্টাইলে শারীরিক নির্যাতন চালায়। তাদের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই আজ সকালে আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের মিছিলে আক্রমণ চালায়। ছাত্রদল নেতারা হাইকোর্ট চত্বরে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও ছাত্রদল ও আইনজীবীদের ওপর রক্তাক্ত হামলা চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদের আক্রমণে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রদলের মিছিলে গুলিবর্ষণ করছে। বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে ২৮ অক্টোবরের লগি- বৈঠা স্টাইলে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ আইনজীবীরাও। ছাত্রলীগের হামলায় সুপ্রিম কোর্টও রক্তাক্ত হয়েছে। ছাত্রলীগের এই আচরণ সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
রিজভী আরও বলেন, শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে তৈরি করেছেন গণতন্ত্র ও বিএনপির বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে লিপ্ত থাকার জন্য। অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য জনগণকে শেখ হাসিনার প্রয়োজন নেই। তার খুবই প্রয়োজন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। আর এই প্রয়োজন মেটাতেই ছাত্রলীগ-যুবলীগকে এখন অস্ত্র দিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাহবা কুড়ানোর জন্য তারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিরোধী দলের রক্ত নিংড়িয়ে নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই খুনি বাহিনী বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শ্রমিক বিশ্বজিত, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবায়েরসহ বিরোধী ও নিজ দলের অসংখ্য ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১৩ বছরে অর্ধ শতাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে নিহত হয় শিশু রাব্বী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এরা শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি, সমাজের নানা শ্রেণি- পেশার মানুষকে নানাভাবে হয়রানি, হুমকি ও ভয়ভীতির শিকারে পরিণত করেছে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনের মতো সাজিয়েও ভরসা পাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ছাত্রলীগকে তিনি সাজিয়েছেন বিরোধী দল বিনাশে অস্ত্র হিসেবে। জাতির ললাটে একমাত্র মহিলা ফ্যাসিস্টের শাসন এখন দুর্বিষহ রূপ নিয়েছে। নানা কারণে এই সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। তাই জনরোষ থেকে বাঁচতে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সশস্ত্র অবস্থায় মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। তবে ছাত্রলীগকে দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে শেখ হাসিনার মসনদ টেকানো যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত নেতাকর্মীদের নামের তালিকা : ছাত্রদল নেতা শাহীনুর রহমান শাহীন (গুরুতর আহত), ছাত্রদল নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ (গুরুতর আহত), ছাত্রদল নেতা আবদুল কাইয়ুম (গুরুতর আহত), ছাত্রদল নেতা নাহিদ চৌধুরী (গুরুতর আহত), ছাত্রদল নেতা রাজু হাসান রাজন (গুরুতর আহত), ঢাবির আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (গুরুতর আহত), যুগ্ম আহ্বায়ক শাকির আহমেদ (গুরুতর আহত), যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম আবু জাফর, সদস্য, ঢাবি ছাত্রদল, নাছির উদ্দিন শাওন, সাঃ সম্পাদক-এফ এইচ হল শাহাদাত হোসেন, সভাপতি-জিয়া হল তারেক হাসান মামুন, ছাত্রদল নেতা সালেহ মোঃ আদনান, যুগ্ম আহবায়ক (বিজয় ৭১ হল) তানভীর আজাদী (গুরুতর আহত), ছাত্রনেতা আতিক মোর্শেদ, সদস্য নাছির উদ্দিন নাছির, সভাপতি, বিজয় ৭১ হল সোহেল রানা, ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদ, ছাত্রদল নেতা মোঃ মানিক হোসেন, ছাত্রদল নেতা বাহারুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম রাজু, ছাত্রদল নেতা সজীব রায়হান, ছাত্রদল নেতা মোঃ শামীম আকন, ছাত্রদল নেতা মোঃ ইজাবুল মল্লিক, ছাত্রদল নেতা সরদার মিলন, ছাত্রদল নেতা জুবায়ের আল মাহমুদ, ছাত্রদল নেতা নাজমুল ইসলাম বাহার, ছাত্রদল নেতা মাসুদ রানা রিয়াজ, ছাত্রদল নেতা আরিফ মোল্লা, ছাত্রদল নেতা আবুল হোসেন হাওলাদার আশিক, ছাত্রদল নেতা রিমু হোসেন, ছাত্রদল নেতা কাওছার হোসেন, ছাত্রদল নেতা মোঃ শামীম হোসেন, ছাত্রদল নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম মিঠুন, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান আসলাম, ছাত্রদল নেতা গোলাম মওলা লিখন, ছাত্রদল নেতা রাকিব ইসলাম আলভী, ছাত্রদল নেতা সজিব হাওলাদার, ছাত্রদল নেতা এস এম শামীম হোসেন, ছাত্রদল নেতা করিম প্রধান রনি, ছাত্রদল নেতা আতাউর রহমান খান, ছাত্রদল নেতা নাহিদ শাহ পাটোয়ারি, ছাত্রদল নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, ছাত্রদল নেতা কাজী রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা আতাউর রহমান বুলেট প্রমুখ।