গোপনে গৃহবধূর গোসলের ভিডিও ধারণ ও ধর্ষণ, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৯ পিএম, ২৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩৮ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
রংপুরে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে গোপনে এক গৃহবধূর গোসলের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া (২৮) কাউনিয়া উপজেলার মৃত মহির উদ্দিন বসুনিয়ার ছেলে। তিনি সেখানকার হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী গৃহবধূ। গত বুধবার (২৫ মে) রাতে রংপুর মহানগরীর কারামতিয়া এলাকা থেকে মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে কাউনিয়া থানা পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের এক গৃহবধূর দুই সন্তানকে ৩-৪ বছর আগে প্রাইভেট পড়াতেন একই এলাকার মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া। গৃহশিক্ষক হিসেবে বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে একদিন গোপনে ওই গৃহবধূর গোসলের ভিডিও এবং স্থির ছবি ধারণ করেন মাজেদুল। পরে সেই ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর ভয় দেখানোসহ তার ছেলেদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন মাজেদুল।
সর্বশেষ গত বছরের ২৯ অক্টোবর বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মাজেদুল আবারও ওই গৃহবধূকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ নিরুপায় হয়ে ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও রেহাই মেলেনি। ঢাকায় থাকা অবস্থায় ওই গৃহবধূকে শারীরিক সম্পর্কের কথা জানালে তিনি রাজি না হওয়ায় অন্য নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ১২ মার্চ তার ছোট ছেলের (১৭) ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে দেন মাজেদুল।
এছাড়া একই দিন বড় ছেলের (১৮) এক বন্ধুর ম্যাসেঞ্জারেও সেই আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে দেন মাজেদুল। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ওই নারী ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে গত ১১ এপ্রিল মাজেদুলের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত বছরের অক্টোবরে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। অভিযুক্ত মাজেদুল হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, যে অভিযোগ উঠেছে সেটা মাজেদুলের ব্যক্তিগত চরিত্রের বিষয়। এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউনিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামিউল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপরই অভিযুক্ত মাজেদুল আত্মগোপনে চলে যান। বুধবার রাতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ এবং রংপুর র্যাব-১৩ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় রংপুর নগরীর কারামতিয়া এলাকা থেকে মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমুর রহমান বলেন, গত ১১ এপ্রিল ভুক্তভোগী নিজেই থানায় এসে মাজেদুলের বিরুদ্ধে গোপনে গোসলের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তার অভিযোগটি আমলে নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় এবং পর্নোগ্রাফি আইনের ৮(১)(২)(৩) ধারায় মামলাভুক্ত করা হয়।
রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) আশরাফুল আলম পলাশ বলেন, অভিযুক্ত মাজেদুল ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর লুকিয়ে ছিলেন। মামলা দায়েরের পর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।