খুলনায় পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির সমাবেশ পন্ড, আহত দুই শতাধিক, গ্রেফতার ৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১২ পিএম, ২৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:০৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
খুলনায় বিএনপির সমাবেশ পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ যৌথ হামলা চালিয়ে। হামলায় সমাবেশের মঞ্চসহ সরঞ্জাম ভেঙ্গে ফেলে। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ পারভেজ বাবুসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। গোটা এলাকায় তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয় চেয়ার-টেবিল। পুলিশের টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের কারণে মঞ্চে উপস্থিত থাকা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিএনপির প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়। এসময় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ কয়েক দফা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ মুহূর্মুহ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অব্যাহত থাকে।
ঘটনার শেষ পর্যায়ে এসে পুলিশ বিএনপি কার্যালয় থেকে এবং সমাবেশের আশে-পাশে থাকা বিএনপির ৩৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, মহানগর মহিলাদলের সাবেক সভানেত্রী ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, কেসিসির সংরক্ষিত আসনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনজিরা খাতুন, মহিলাদলের নেত্রী কাউসারী জাহান মঞ্জু, মুন্নি জামান রয়েছে। অন্য গ্রেফতারকৃতদের নাম এ লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে খুলনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ হাসান আল মামুন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরে সন্ধ্যা ৭টায় ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি পারভেজ হাওলাদার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তাদের ১০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে খুলনা কেডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপি কার্যাালয়ের সামনে খুলনা মহানগর ও জেরা বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় শুরু হয়। নগরীর প্রতিটি থানা ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খন্ডখন্ড মিছিল আসতে থাকে। বিকেল ৪টার দিকে ডুমরিয়া থানা বিএনপির একটি মিছিল আর্য্যধর্মসভা মন্দির দিয়ে পিকচার প্যালেস মোড়ে হয়ে সমাবেশে যাচ্ছিল। তখন ছাত্রলীগের অপর একটি মিছিল আওয়ামী লীগের অফিসের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় সংঘর্ষের সূত্রপাত। এ ঘটনা শুনে বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা প্রতিবাদের জন্য অগ্রসর হতে চাইলে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বাধা দেয়।
একপর্যায়ে পুলিশ পিকচার প্যালেস এলাকায় অবস্থান নেয়। এখবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিএনপির সমাবেশস্থলে। তখন নেতা-কর্মীরা অগ্রসর হতে থাকে পিকচার প্যালেসের দিকে। অপর দিকে দলীয় কার্যালয়ে চলছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ। সেখান থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে বিএনপির সমাবেশস্থলে আসতে চাইলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে পুলিশ প্রথম টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে বিএনপিন নেতা-কর্মীদের স্যার ইকবাল রোড থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর বিকেল ৪টা ২৯ মিনিটে বিএনপি নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা লাঠিসোঠা, বাঁশ ও ইট নিয়ে হামলা করে। তাদের সঙ্গে পুলিশ এক হয়ে বিএনপি কর্মীদের কেডি ঘোষ রোড ও কালীবাড়ি রোডে ধাওয়া করে। চলতে থাকে পুলিশ-ছাত্রলীগের যৌথ হামলা। এ সময় পুলিশ রাবর বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। গুলি ও টিয়ারসেলে টিকতে না পেরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সামবেশস্থল ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী বামাসেল রোড, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডসহ আশে-পাশে অবস্থান নেয়। বিএনপি নেতা মাসুদ পারভেজ বাবুর পায়ে পুলিশ সরাসরি গুলি করে। এসময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষিপ্তভাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তান্ডব চালিয়ে বিএনপির সমাবেশের মঞ্চ, চেয়ার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। হামলায় শাসক দলের অঙ্গ সংগঠনের মহানগর জেলার কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হেলমেট পরে অংশ নিতে দেখা যায়। যা চলতে থাকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে কার্যালয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেধড়ক পেটায়। সেখান থেকে মহিলাদলের প্রায় ১০জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও ষেয়দা রেহানা ঈসাকে গ্রেফতার করে।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলামসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে যান।