নারায়ণগঞ্জে আ’লীগের দলীয় কার্যালয় বিক্রির অভিযোগ আইভীর মামার বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২২ পিএম, ২৫ মে,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয় বিক্রি করে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর আপন মামা মনোয়ার হোসেন মনার বিরুদ্ধে। তিনি ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ইতিমধ্যে অফিস বিক্রি বাবদ ৩ দফায় ৯৫ লাখ টাকা লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।
অবশ্য এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আনোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, নগরীর দেওভোগে শেখ রাসেল নগর পার্কের প্রধান ফটকের বিপরীতে আওয়ামী লীগের ১৬নং ওয়ার্ড কার্যালয় অবস্থিত। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনের শেষে দিকে বর্তমান ওয়ার্ড কমিটির পথ চলা শুরু হয়। দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি অবস্থিত হলেও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি হোসিয়ারি কারখানা।
চলতি মাসে নিচতলার আওয়ামী লীগ অফিসটির পজিশন ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। পজিশন বিক্রি করেই ক্ষান্ত হননি সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনা। ৫০ লাখ টাকার সাথে আরও ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন ক্রেতা। তার কাছ থেকে কার্যালয়ে ভেতরে ৪টি দোকানের মধ্যে একটি দোকানও চেয়ে নেন মনা। দোকান পেয়েই এক হোসিয়ারি মালিকের কাছে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে টাকা নিয়ে নেন তিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পজিশন ক্রয় করেছেন দেওভোগে পাক্কা রোডের তোফাজ্জল হোসেন মুকুল। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের ছোট ভাই। পজিশন বিক্রির জন্য কতিপয় নেতাদের নিয়ে সভা ডেকে একটি রেজুলেশন করেন সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনা। উপস্থিত সবার স্বাক্ষর নেয়া হয় এতে। সেখানে লেখা হয়েছে, ভবিষ্যতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি পরিবর্তন হলেও নিচতলা বিক্রির সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। এবং ভবিষ্যতে কেউ আপত্তি করলে তা সর্ব আদালতে অগ্রাহ্য বলে বিবেচিত হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনা’র মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদেও প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, কার্যালয় নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। কেউ লিখিত অভিযোগও আমাদের কাছে দেয়নি। এমন কিছু হলে তো কোন কোন নেতা আমাদের জানাতে বা লিখিত আকারে দিতে পারতো। তারপরও আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আসলে ওয়ার্ড কার্যালয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে ওয়ার্ড কমিটি। তারা যদি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাদের সদস্যরা প্রতিবাদ জানাতে পারতো। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে একজন বাম নেতা বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকালে এ অফিসটি সম্মিলিত বিরোধী দলের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিগত শতকের ৯৬ সাল পর্যন্ত প্রতিটি ১৫ আগস্টেই এ অফিস প্রাঙ্গণ থেকে শহরব্যাপী বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসের খিচুড়ি বিতরণ হতো।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানান, স্বাধীনতার পর রেলের কাছ থেকে জায়গা বন্দোবস্ত এনে এ অফিসটি নির্মাণ করে দেওভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা। সে সময় দেওভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন, যথাক্রমে মোনায়েম সরদার ও আলম চান মুন্সী। বন্দোবস্ত আনা হয়েছিল মোনায়েম সরদার ও মহিউদ্দিন আহমেদের নামে। পরবর্তীতে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও শহরের বিত্তবান ব্যবসায়ীদের টাকায় অফিস ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দল ক্ষমতায় এক যুগেরও বেশি। তারপরও নেতাদের এত ক্ষুধা যে দলীয় কার্যালয় বিক্রি করে খেতে হবে ?