বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩২ পিএম, ২৪ মে,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
'ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে'র রুপরেখা প্রণয়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার (২৪ মে) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন দলের স্থায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ''স্থায়ী কমিটির সভায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। (আজ মঙ্গলবার) এই আলোচনা আমরা শুরু করবো। আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলব। তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা চূড়ান্ত যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের যে রুপরেখা, সেই রূপরেখা তৈরি করা হবে।"
প্রথম দিন মঙ্গলবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের সাথে সংলাপে বসবে বিএনপি। নাগরিক ঐক্যের তোপখানা রোড়ে কার্যালয়ে এই সংলাপ হবে বিকাল ৫টায়।
আলোচনা কী ২০ দলীয় জোটের সাথে হবে না অন্যান্য দলের সাথেও হবে- এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''সকলের সঙ্গেই হবে, অল দ্যা পলিটিক্যাল পার্টিসের সঙ্গে।"
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''কথা তো বলতে হবে। অবশ্যই । তাদের সাথে কথা না বললে কেমন করে হবে। সকলের সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে।"
২০ দলীয় জোট থাকবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করি নাই। এই জোটের কী হবে সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজিড করবো।"
গত ২৩ মে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব তুলে ধরেন।
সংলাপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ''এই আলোচনার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং এই ফ্যাসিবাদী সরকার যারা মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং আজকে অর্থনীতি, দেশের সমস্ত যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোকে ধবংস করে ফেলেছে সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা-এটাই হচ্ছে আমাদের মূল্য লক্ষ্যে। এজন্য আন্দোলন তৈরি করতে হবে। এই আন্দোলন তৈরি করতে ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এই আলোচনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।"
তিনি বলেন, ''আমাদের মূল যে দাবিগুলো আছে, প্রথম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সমস্ত রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি, দুই,. এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারা পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তিন, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং তারপরে পূনগঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠন হবে, সরকার গঠন হবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে দাবিগুলো থাকবে। এখন অন্যান্য গুলোর সঙ্গে এই আলোচনা করব এবং এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে। একক দাবিতের প্রেক্ষিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করবো।"
এই একক ঐক্যের জোটের কী নামকরণ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''আমরা একে জোট বলছি না, অন্য কোনো কিছু বলছি না। আলোচনা করার মধ্য দিয়ে ফরমেট, ফ্রম নির্ধারিত হবে।"
'২৬ মে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি'
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৬ মে ঢাকা ছাড়া সকল মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো যৌথভাবে বিভোক্ষ সমাবেশ করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসসহ দেশে সিনিয়র সিনিজেনদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসন্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''স্থায়ী কমিটির সভায় দুর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ ততপরতার একেবারেই অপ্রতুল হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। একদিকে যখন বন্যা দূর্গত মানুষের ত্রাণের জন্য আহজারি করছে সেই সময়ে জনৈক মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের সময় সাহায্য প্রার্থী হাজার মানুষের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাত জানানো হয়। বন্যার্তদের উপরে এই আক্রমণ আওয়ামী লীগের স্বভাবজাত অমানবিক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিফলন।
তিনি বলেন, সিলেটের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সকল নেতা-কর্মীদের বন্যা দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানানো হয়।"
সকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।