দেশের আকাশে মহাদুর্যোগের ঘনঘটা : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৯ পিএম, ১৯ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের আকাশে মহাদুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার চেয়েও মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে দেশ। তিনি বলেন, সরকারের ভয়াবহ লুটপাটে অর্থনীতি ইতিহাসের সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায়। এই পরিস্থিতি উত্তরণে আন্দোলনের বিকল্প নেই। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে উচ্ছেদ করেই আসন্ন ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। নয়তো চরম খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন লুটের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। পি কে হালদার একজন নয়, এরকম হাজারো অর্থ লুটেরা সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দেশের সব সম্পদ লুটে বিদেশে পাচার করছে। যেকারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র চার মাস চলার মতো নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে দেশ এক ভয়ঙ্কর অমানিশায় নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার চেয়েও মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হতে পারে।’
‘অথচ সরকারের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তারা শুধু ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছানো, লুটপাট নিয়ে। প্রতিটি উন্নয়ন কাজে অস্বাভাবিক বরাদ্দ দিয়ে অর্থ তছরুপ করছে আর সেই তহবিল রক্ষায় জনগণের পকেট কাটছে নিত্যপণ্যসহ সকল সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করে। এমনকি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সেবাখাতগুলোর দাম বাড়িয়েছে অসংখ্যবার। যার ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিটি নাগরিককে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি দলের লোকজন রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছে পরিণত হয়েছে। যারা এককালে ছেড়া স্যান্ডেল পড়ে ঘুরতো তারা আজ লুটপাটের সহযোগী হয়ে দামি গাড়িতে চড়ে বেড়াচ্ছে। এই অর্থ জনগণের। অথচ জনগণ আজ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
সাধারণ জনগণ নিজের ভোটটিও দিতে পারে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দিনের ভোট রাতে লুট করে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখে দেশকে চরম নৈরাজ্যে নিমজ্জিত করেছে। ক্ষমতার অহংকারে তারা এতটাই নিচে নেমেছে যে প্রধানমন্ত্রীও অহরহ বেফাঁস কথা বলছেন। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনুস সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছেন। ন্যূনতম শিষ্টাচারবোধও নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন জনস্বার্থ বিরোধী লুটেরা, খুনি ও হিংসাপ্রবণ সরকার আজ আমাদের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। এদের ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া জনগণের মুক্তি নেই। তাই দেশবাসী জনবান্ধব দেশপ্রেমিক দল বিএনপির দিকে চেয়ে আছে। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে জন আকাঙ্ক্ষা পূরণে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।’
তিনি বলেন, সৈয়দপুর বিএনপির উর্বর ভূমি। জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘাঁটি। এজন্য এখানে সবধরনের আন্দোলন সংগ্রাম খুবই জোড়ালোভাবে হয়। অতীতের মতো আগামীতেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে দেশবাসীকে রক্ষায় যেকোনো আন্দোলনের ডাক এলে ডান-বাম না দেখে সোজা রাজপথে নামার জন্য সৈয়দপুরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা: জিকরুল হক রোডস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই কর্মিসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশলী ইশরাক হেসেন, রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার।
বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘প্রবীণদের দোয়া নিয়ে অচিরেই উপস্থিত তরুণ প্রজন্মের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে এই স্বৈরাচার সরকারকে সংসদ ভেঙে বিদায় নিতে হবে। দেশের মানুষ এই নির্যাতন-নিপীড়নকারী সরকারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া না হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এবং এই কর্মসূচিই হবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলন। তাদের পতন নিশ্চিত করে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহীন আখতার শাহীন। সঞ্চালনায় ছিলেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক শওকত হায়াত শাহ।
কর্মিসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, রংপুর বিভাগীয় আহ্বায়ক সামসুজ্জামান শামু, রংপুর জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাবু, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এস এম ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক জিয়া, সৈয়দপুর পৌর আহ্বায়ক শেখ বাবলু, সদস্য সচিব এরশাদ হোসেন পাপ্পু, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম, নীলফামারী সদর উপজেলা সদস্য সচিব কাজী জুয়েল, সৈয়দপুর ওলামাদল যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সাইদুল ইসলাম, ছাত্রদল সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবু, মহিলা দল সভাপতি রওনক আফজাল রিনু ও কৃষকদল সদস্য সচিব সাদিদুজ্জামান সরকার দিনার।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে সদ্য মরহুম রংপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বিপুর স্ত্রী ও মেয়ের হাতে দলের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকার অর্থসহায়তার চেক তুলে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।