বৌদ্ধ সম্প্র্রদায়ের সঙ্গে বিএনপির শুভেচ্ছা বিনিময়
বিদেশে অর্থ পাচারকারীসহ তাদের মদদদাতাদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৮ পিএম, ১৫ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০৮ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিদেশে অর্থ পাচারকারীসহ তাদের মদদদাতাদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি জানান। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপি ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানান দলটির মহাসচিব। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং তাদের বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। এরপর কমলাপুর আন্তর্জাতিক ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের বিদর্শাচার্য এস শাসনবংশ মহাথের বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রার্থনা করেন। পরে মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের সুনন্দ মিত্র থের বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের প্রশ্ন এরকম কতজন পিকে হালদার আছে, আর এরকম কতজন মানুষ আছে? আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি যে, হাজার হাজার কোটি টাকা তারা দেশ থেকে লুট করে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা জানতে চাই যে, এই ধরনের (পিকে হালদারের মতো) হাজার হাজার কোটি টাকা কত পাচার হয়েছে। একদিনে তো পাচার হয়নি। কিভাবে কোন পদ্ধতিতে পাচার হলো, কারা তার সঙ্গে জড়িত ছিলো, কারা মদদ দিয়েছে- সেই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য আমরা আজকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে এই যে দুর্নীতি হচ্ছে, চুরি হচ্ছে, ডাকাতি করে অর্থ পাচার করা হচ্ছে তা অবশ্যই তদন্ত করে বের করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। সুযোগ পেলেই বিএনপির লোকদেরকে হয়রানি করা আর কিছু চুনোপুঁটি লোককে ধরে হয়রানি করা। আমরা চাই, এই ধরনের যারা বড় বড় আছেন বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদেরকে জনগণের সামনে আনতে হবে, আইনের আওতায় আনতে হবে। নিশ্চয়ই আপনি আজকের খবরের কাগজ খুলে দেখেছেন যে, একজন পিকে হালদার যিনি হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাকে পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা ভালো কথা। আমরা খুবই খুশি কিছুটা হলেও যে, একজন যিনি টাকা পাচার করেছেন তাকে ধরা হয়েছে ভারতে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি নিজেই বলেছেন, ফরিদপুরের একটা সম্মেলনে যে, হাজার হাজার কোটি টাকা যারা পাচার করেছে তাদেরকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেয়া হবে না। তার মানে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের লোকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে হলে আমাদের সকল ধর্মের, মতের, রাজনৈতিক দলের লোকদেরকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে একসাথে এক জোটে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ সরকার যারা আমাদের দেশে জোর করে ক্ষমতায় চেপে বসে আছে তাদেরকে সরিয়ে এখানে সত্যিকার অর্থে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা সংসদ এবং সরকার গঠন করি- এটাই হচ্ছে আমাদের এখন সবচেয়ে বড় কাজ। এই বড় কাজটা করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আসুন এই পবিত্র দিনে আমরা এই শপথ গ্রহণ করি।
বৌদ্ধ ধর্মকে শান্তি ও অহিংসার ধর্ম উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আজকে আড়াই হাজার বছর পরেও আমরা দেখছি- এই পৃথিবীতে এখন, হিংসা, যুদ্ধ, হত্যা ও ধর্ষণ এমন অবস্থায় চলে গিয়েছে যে, সমগ্র মানব জাতি বড় রকমের বিপদের সম্মুখিন হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে। যে কারণে আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটা গণতান্ত্রিক, শান্তিময় দেশ এবং আমরা একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম যে, এখানে কোনো সম্প্রদায় সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিদ্বেষ থাকবে না এবং মানুষের মধ্যে কোনো হানাহানি হবে না। কিন্তু আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এদেশে তা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। আজকে শান্তির বদলে এখানে সম্পূর্ণ অশান্তি। শান্তির কথা বলে এখন শান্তিকে রক্ষা করা যাবে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন শান্তির কথা বলে আমরা আমাদের ধর্মকে রক্ষা করতে পারবো না। শান্তির কথা বলে আমরা অন্যায়কে প্রতিহত করতে পারবো না এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারবো না। তাই আজকে যারা এই যে অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাদেরকে ক্ষমতা থেকে না সরালে এদেশের মানুষের কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না।
বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও জিয়া পরিষদের নেতা সুভাষ চন্দ্র চাকমার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, বিএনপি নেতা জন গোমেজ, অমলেন্দু দাস অপু, আবদুল বারী ড্যানী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তরফ থেকে মনীষ দেওয়ান, সুশীল বড়ুয়া, উদয় কুসুম বড়ুয়া, প্রবীন চন্দ্র চাকমা, চন্দ্র গুপ্ত বড়ুয়া, সনত তালুকদার, রনজিত বড়ুয়া, অনিমেষ চাকমা রিংকু, জয়ন্ত বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া, পারদর্শী বড়ুয়া। এই অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ড, বীথিকা বিনতে হোসাইন, তরুন দেসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মিষ্টি দিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের আপ্যায়ন করা হয়।