সরকার আবার পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৭ পিএম, ২৩ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকার আবার পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ মার্কেট এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় হেলমেটধারী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার ও প্রায় ২৪ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতার নাম উল্লেখ করে প্রায় ১২শ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি মনে করে এই অবৈধ সরকার পুনরায় পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। টানা দুই দিনে সংঘর্ষ বন্ধ করতে না পারায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতাকে যখন জনগণ দায়ী করছে সেই সময়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির নিরপরাধ নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আড়াল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের সাথে ছাত্রলীগই দায়ী বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যে সত্যটি উদঘাটিত হয়েছে, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। ভিডিও ফুটেজ থেকে অন্তত তিন জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। গণমাধ্যমের রিপোর্টে এটাও স্পষ্ট যে, প্রধানত চাঁদাবাজির কারণে এবং নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের ভয়াবহ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনার জন্য দায়ী। শুধু এই ঘটনাই নয়, নিউ মার্কেটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই শাসক গোষ্ঠীর ছাত্রছায়ায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশের সহায়তায় সেখানে অপরাধ জগৎ গড়ে তুলেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমের রিপোর্টিংয়ে বেরিয়ে এসেছে যে, এই পুরো এলাকাটা ইনক্লুডিং টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার, হোস্টেল সবগুলোই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বরাদ্দকৃত যে রুম সেই রুমও তারা সাবলেট করে ভাড়া দেয়। এটাও রিপোর্টে এসেছে। এটাও এসেছে যে, ছাত্রলীগের সুনির্দিষ্ট কমিটি না থাকার কারণে অনেকগুলো গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপগুলোর বিরোধের কারণে এসব ঘটনা প্রায় ঘটে। আরেকটা বড় দিক হচ্ছে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এসব ঘটনায় যার ফলে এসব ঘটনা ঘটছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির কারণে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে যখন জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তখন জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এই সংষর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিকে জড়াচ্ছে। সরকার পূর্বের মতই মামলার বেড়াজালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বন্দি করার চক্রান্ত করছে। মামলা, গ্রেফতার, গুম, খুন, হত্যা এই সরকারের প্রধান অস্ত্র যা দিয়ে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। নিউ মার্কেটের সন্ত্রাসী সংঘর্ষ, পুলিশের ভূমিকা এবং পরবর্তীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও মামলা দায়ের আবারো প্রমাণ করলো আওয়ামী লীগ সরকার ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে, হত্যা করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে নিউ মার্কেটের প্রকৃত ঘটনার তদন্তে দলের তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা জনসমক্ষে প্রকাশ করব। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কথা আমরা বলি না। কারণ বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিউ মার্কেটের ঘটনায় নাহিদ ও মুরসালিনের নিহত হওয়ায় শোক প্রকাশ করা হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদেরে সমবেদনা জানানো হয়। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় আহত সাংবাদিকসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের আশু সুস্থতা কামনা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনা প্রমাণ করেছে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই ভয়াবহ হামলা, পাল্টা হামলা, মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে মানুষ মারছে অথচ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা জনগণের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।