নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : মামলায় বিএনপির মকবুলসহ ২৪ জনের নাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৮ পিএম, ২১ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। এ দুই মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করেন। এই তিন মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু একটিতেই ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলাটির বাদী পুলিশ। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন অ্যাডভোকেট মকবুল, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল। আসামিদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মকবুল নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি বলে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ ম কাইয়ুম।
তিনি বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আহত ও ভাংচুরের অপরাধে ৪৩/১৪৭/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৪২৭/৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও কর্মচারী ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের ৬০০-৭০০ জন ছাত্রও রয়েছেন অজ্ঞাতনামা হিসেবে। এই ২৪ জনের পরিচয় জানতে চাইলে ওসি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না। আসামিদের গ্রেফতারে থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২৪ জন এজাহারনামীয়সহ ব্যবসায়ী-কর্মচারী অজ্ঞাতনামা ৩০০ জন। এছাড়া একই মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঢাকা কলেজের ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা আরেকটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। এছাড়া নাহিদ হাসান নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। এই মামলায় ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাহিদ হাসান নামে এক ডেলিভারিম্যান।
জানা যায়, ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন নাহিদ। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মো. মুরসালিন (২৪) নামে এক দোকান কর্মচারী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলো। তিনদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়ে ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ পুলিশের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন।