গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া, দুর্নীতি করা আ.লীগের অপরাধ - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৩ পিএম, ২১ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:০৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জন ধূলিসাৎ করে দিয়ে আজকে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আজ বৃস্পতিবার দুপুরে শেরে বাংলা নগর জিয়া উদ্যানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নবনির্বাচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়াকেসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পরে মাজারের সামনে নতুন ছাত্র নেতৃত্ব মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে শপথ বাক্য পাঠ করেন। গত ১৭ এপ্রিল ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে শ্রাবন ও জুয়েলের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই কথাগুলো উনি (রাষ্ট্রদূত) সঠিক বলেননি। আমাদের যিনি বক্তব্য রেখেছিলেন সেই মিটিংয়ের পরে তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) কখনোই একথা বলেননি, জার্মান রাষ্ট্রদূতকে কোট করে তিনি কোনো কথা বলেননি। আপনারা সেখানে ছিলেন, আপনারা সবই জানেন। তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) সামগ্রিকভাবে ইনজেনারেল যে কথাটা বলেছেন সেটাই উনি (রাষ্ট্রদূত) মিস কোট করেছেন।
ডিক্যাব অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি যে উদ্ধৃতি পড়েছি তা বাস্তবতার সাথে মেলে না। যেখানে বলা হয়েছে, আমি দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এমন শব্দ চয়ন সত্য নয়। এই উদ্ধৃতি নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট। গত ১৭ মার্চ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার।
বৈঠক শেষে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাদের আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সবাই অবগত আছে। এখানে নতুন করে বলার কিছু নেই। এগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনাও হচ্ছে এটা তো আপনারা জানেন। এসব ব্যাপারে ওনারা কনসার্ন। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আলোচনা হচ্ছে, ওনারা তো তার একটা অংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, আমেরিকা বলেছে, ব্রিটেন বলেছে, সবাই বলছে।
জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে সারাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে তারা তাদের অক্ষুণœ রাখবে এবং সামনের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে।
দেশে কোনো সরকার নেই বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সংঘর্ষের (নিউ মার্কেট এলাকায়) ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, আসলে দেশে কোনো সরকার নেই। এই সরকার একটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকারে পরিণত হয়েছে এবং তারা এই রাষ্ট্রকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাদের চোখের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা সংঘর্ষ হয়েছে দুইটি পক্ষের মধ্যে। সেটাকে তারা (সরকার) বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু তাদের কর্মকর্তারা যে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিচ্ছে যে তারা কোনো পক্ষেই ছিলেন না, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে তারা এই সংঘর্ষকে আরো বেশি করে ছড়িয়ে দেয়ায় সহযোগিতা করেছে এবং আমরা সবাই জানি যে, এই ধরনের ঘটনাগুলোতে যারা দায়ী থাকে তারা হচ্ছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। ওই ঘটনায় যে দুজন মারা গেছেন -এই মৃত্যুর জন্য এই হত্যার জন্য তারাই দায়ী।
‘আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী যে সরকার হটাতে চায়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আমাদের অপরাধটা কী? ওনাদের অপরাধ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। এদেশে গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে, এই দেশে তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, এই দেশকে তারা দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে লক্ষ্যগুলো ছিলো সেই সমস্ত লক্ষ্যগুলোকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে তারা আজকে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে একটি দেশকে পরিচালনা করতে, দেশকে একটা সুষ্ঠু জায়গা নিয়ে আসতে এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠা করতে। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আজকে আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশ থেকে গণতন্ত্র হরণ করেছে, ছাত্রদের যে ন্যূনতম অধিকারগুলো রয়েছে ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ন্যূনতম খরচের ব্যয়ে শিক্ষালাভ করা সেই অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম দুযোর্গের দিকে গেছে এবং ভয়াবহ এক দুর্নীতির করাল গ্রাসে এদেশকে তারা পতিত করেছে। এসব কারণে দেশের মানুষ দাবি তুলে অবিলম্বে এই মহূর্তে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধায়নে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নিরপেক্ষ পার্লামেন্ট তৈরি করা- এটাই এখন সবচেয়ে বড় দাবি এবং আন্দোলন। এ দেশে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জন ধূলিসাৎ করে দিয়ে আজকে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, আকরামুল হাসান মিন্টু, ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী নেতৃত্ব ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।