নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন ফখরুলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৪ পিএম, ২০ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৫ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সাথে ছাত্রদের গতকাল দিনভর সংঘর্ষ বন্ধে পুলিশের 'নিষ্ক্রিয়' ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার (২০ এপ্রিল) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব এই প্রশ্ন তুলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''গতকাল নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যে সংঘর্ষ হয়েছে এতে একজনের প্রাণ গেছে এবং কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। আমার প্রশ্ন যে, পু্লিশের যে কর্মকর্তারা দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেছেন যে, স্ট্যাটেজিক কারণে আমরা (পুলিশ) নিষ্ক্রিয় ছিলাম।"
''কোন স্ট্যাটেজিক কারণে আপনারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন? সেই স্ট্যাটেজিক কারণ হচ্ছে দেশে মানুষ তারা নিহত হবে, এই স্ট্যাটেজিক কারণে যে একটা সমস্যা তৈরি হবে, সেই সমস্যা নিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে প্রবাহিত করবে? কোন স্ট্যাটেজিক কারণ থাকে যখন বিএনপির ছোট-খাটো কর্মসূচি থাকে তা প্রতিরোধ করার জন্য শত শত হাজার হাজার পুলিশ মুহুর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়। কোন স্ট্যাটেজিক কারণে গুলি করে বিএনপির মিছিলগুলো স্তব্ধ করে, কোনো স্ট্যাটেজিক কারণে মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলের যে বৈধ আন্দোলন সেটাতে ব্যাহত করে দেয়।"
তিনি বলেন, ''এই কথা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না যে, এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এই ব্যর্থ সরকার এখন রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করেছে। এটা একটা ফেল্ড স্টেট। কোথাও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।"
''আজকে পুলিশকে জবাবদিহি করতে হয় না, অন্যান্য ডিপার্টমেন্টগুলো আছে সেখানে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, চুরি করে, দুর্নীতি করে সেখানে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। এই যে এতোগুলো দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হলো, আমরা বললাম তারপরেওে সেগুলোর বিষয়ে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে নাই দুদক।"
সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার দিনভর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকানকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ইট ও লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন ছাত্র, দোকানকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পথচারীসহ অন্তত ৪০ জন। আহতদের মধ্যে গত রাতে নাহিন হাসান নামে এক পথচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান।
'১৫ বছরের পুরনো মামলার প্রসঙ্গ'
তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দায়ের কৃত মামলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ''১৫ বছর আগে দুদকের একটা মামলা গতকাল রিভাইব করা হয়েছে, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একটি মামলা একই রিভাইব করা হয়েছে। এখন পুরোপুরি ডাইভারশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে যখন তাদের দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।"
''আপনার নিশ্চয় লক্ষ্য করেছে যে, আজকাল কিছু পত্রিকাতে তাদের (সরকারের লোকজন) বিভিন্ন দুর্নীতির খবর করে। যেমন কয়েকদিন আগে বেরিয়ে কুষ্টিয়ার স্কুল শিক্ষিকা শত কোটি টাকার উপরে তার সম্পদ, তার স্বামী এখন উপজেলা চেয়ারম্যান তার হাজার কোটি টাকার উপরে সম্পদ এবং তিনি একজন অত্যন্ত প্রভাবশাল আওয়ামী লীগ নেতা ..। প্রত্যেকটি জেলা, প্রত্যেকটি উপজেলায় এবংকি ইউনিয়নের পর্যন্ত দুর্নীতি করছে ওরা।"
প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর ফাঁস হওয়া কথোপকথনের বিষয়ে তদন্ত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্নীতির দমন কমিশনের চিঠি দেয়ার কথাও জানান তিনি বলেন, ''দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। যেটা কোনো মতেই কোনো মামলা হতে পারে না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আবার শুরু করতে যাচ্ছে। অথচ সরকারের দুর্নীতির কোনো তদন্ত দুদক করছে না। এই দুদকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণের মধ্যে আছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে, সমগ্র প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে।"
''সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে ছন্মবেশী একদলীয় ব্যবস্থা চলছে। এখন তাদের লক্ষ্য আগামী যে নির্বাচন আছে সেই নির্বাচনকে কি করে আগের মতো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে, আবার তারা ক্ষমতায় আসবে সেটাই তারা করছে।আজকে এটা প্রমাণিত সত্য দেশে গণতন্ত্র নাই, আজকে প্রমাণিত সত্য দেশে অবৈধ সরকার জবরদখল করে ক্ষমতায় বসে আছে, আজকে প্রমাণিত সত্য তারা গুম করে, খুন করে, নির্যাতন করে মানুষকে কারাগারে পাঠিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে।"
এই অবস্থা থেকে উত্তরনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে 'রুখে দাঁড়ানোর' আহবান জানান ফখরুল।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে দলের গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ঈদ সহযোগিতা দিতে এই অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাঁচ পরিবারের সদস্যদের দেশনায়ক তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিশিষ্ট সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী সুমি আখতার বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির মীর হেলাল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজমুল আহসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান ও আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এবিএম আবদুস সাত্তার, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।