‘মানুষ হাসতে হাসতে বাজারে যায় কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফেরেন’ - হাবিবুন নবী খান সোহেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৯ পিএম, ১৯ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪০ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেছেন, এবারের রমজানে মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কারণ মানুষ ঠিকমতো সাহরী খেতে পারছেন না। ঠিকমত ইফতার খেতেও পারছেন না। মানুষ হাসতে হাসতে বাজারে যায়, কাঁদতে কাঁদতে খালি ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফেরেন। এটিই হচ্ছে এখন বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর এতে কিন্তু কিচ্ছু আসে যায় না। কারণ তিনি মনে করেন। যেহেতু তার ভোট লাগে না। তাই জনগন বাঁচুক বা মারা যাক, তাতে তার কিছুই আসে যায় না। এখন তিনি নতুন নতুন রেসিপি দেয়া শুরু করেছেন। কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানাতে বলছেন। আচ্ছা, বেগুনিতে বেগুনই যদি না থাকলো, তাহলে কি আর সেটা বেগুনি হল? স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান একবার ছবি আঁকলেন, এরশাদের অবায়ব দিয়ে ক্যাপশন লিখলেন, ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার ক্ষপ্পরে’। আজ তিনি জীবিত থাকলে, শেখ হাসিনার অবায়ব এঁকে ক্যাপশন লিখতেন, দেশ আজ বিশ্ব বাটপারের ক্ষপ্পরে।
আজ মঙ্গলবার খুলনা জেলা বিএনপি আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মহিফলের পূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খুলনা ক্লাব মিলনায়তনে খুলনার বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সম্মানে প্রতি বছরের ন্যায় এই ইফতার মাহফিলে আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশের বিরোধী দল-মত দমন-নিপীড়নের চিত্র জেনে গেছে। ইতোমধ্যে ৬জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেদিন নিষেধাজ্ঞা আসলো, সেদিন আমি ঢাকার একটি মার্কেটে গেছিলাম। সেখানে দেখলাম-কিছু মানুষ নিজের মধ্যে আলোচনা করছেন, তারা বলছেন- শুধু ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসলে হবে না, পুরো পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা হওয়া উচিত। নিষেধাজ্ঞা হলে সবকিছুর হোতা যিনি, সব মাফিয়ার বড় মাফিয়া যিনি, সেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত। এটি হচ্ছে জনগনের ‘সেন্টিমেন্ট’। যেদিন শেখ হাসিনার নামে নিষেধাজ্ঞা আসবে, সেদিন বাংলাদেশের কোন মিষ্টির দোকানে মিষ্টি পাওয়া যাবে না, শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেছেন, বিগত কয়েক বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, যেই নির্যাতন হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও বিরোধী দল-মতের উপর এরকম অত্যাচার হয়েছে এমন নজির নেই। আন্দোলন-সংগ্রাম করে এই স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের হাত থেকে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মানুষকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সেই আন্দোলনে নামলে বাঁধা হয়ে আসবে পুলিশ। যে পুলিশ বাহিনীর কাজ হচ্ছে দেশের জনগন রক্ষা করা। সেই পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন জনগনের শত্রু অবৈধ সরকারকে রক্ষা করছে। যে পুলিশের দায়িত্ব জনগনের ভোটাধিকার রক্ষা করা, সেই পুলিশ রাতের আঁধারে সীল মেরে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে।
সোহেল আরও বলেন, রমজান মাস আমাদের সামনে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। আপনারা জানেন-রমজানে দোয়া বেশি বেশি কবুল হয়। আমরা দোয়া করবো, নিরাপরাদ-নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার ও কোটি কোটি মানুষের ওপর জুলুম করেছেন মহান আল্লাহ্ যেনো সেই জুলুমবাজ ফ্যাসিষ্টদের হাত থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দেন, নি®কৃতি দেন। শুধু দোয়া করলেই হবে না, চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে এই আওয়ামী জুলুমবাদ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তৃতায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, চার দেওয়ালের মধ্যে স্লোগান দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের কবল থেকে দেশ মুক্ত করা সম্ভব নয়। ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে। জেলা ও মহানগর বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। পরিশ্রমী-ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর আগামীর কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র এনে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজকের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মানুষ বিএনপি’র দিকে তাকিয়ে আছে। আমার দেশবাসীকে হতাশ করতে পারি না। গণতন্ত্র পুনর্দ্ধারে অতীতেও বিএনপির নেতাকর্মীরা বুকের রক্ত দিয়েছেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে আবারও সেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আর কোনো নিশিরাতের সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না।
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খানের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খান রবিউল ইসলাম রবি ও শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিন, সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহির ও জেলার সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক শেখ আবু হোসেন বাবু।
ইফতার মাহফিলে সম্মানিত অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জেলার আমীর মাওলানা এমরান হোসাইন, মুসলিম লীগের মহানগর সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আকতার জাহান রুকু, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেট স্কুলের সাবেক ডীন প্রফেসর ড. হারুনুর রশীদ, বিএমএ খুলনার সাবেক সভাপতি ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাবলু, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্যা, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি মোঃ রাশিদুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য এহতেশামুল হক শাওন প্রমুখ।
ইফতার পূর্ব দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দল নেতা হাফেজ মাওলানা জাহিদুর রহমান।
দোয়া ও মোনাজাতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তার কনিষ্ঠপুত্র ক্রীড়া সংগঠক আরাফাত রহমান কোকোসহ দলের প্রয়াত সকল নেতাকর্মীর মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। একই সাথে বিএনপি চেয়ারপার্সন ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সাবেক সফল তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা, কারামুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের পূর্ণ সুস্থ্যতা ও শিগগিরই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে খুলনার রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, আলেমওলামায়ে কেরাম, দলীয় নেতাকর্মী ও এতিমখানার ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেন।