গাংনীতে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সংঘর্ষ, যুবলীগ নেতার গুলি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩২ পিএম, ১৯ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২৫ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন পিস্তল উঁচিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
সদ্য গঠিত গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি রাজাকার মুক্ত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের ৭ ঘণ্টা পর সোমবার সন্ধ্যা রাতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ‘রাজাকার, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিমুক্ত আওয়ামী লীগ গঠন বাস্তবায়ন পরিষদ নাম দিয়ে গাংনী উপজেলা যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও কৃষকলীগের কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন ।
মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবে সোমবার দুপুরে ওই পরিষদের আহবায়ক ইসমাইল হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ১৮ বছর পর গত ১০ এপ্রিল ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অভিযোগ পাশ কাঁটিয়ে গাংনী উপজেলা কমিটি গঠন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
যার সভাপতি মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের এমপি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল উভয়ে রাজাকারপুত্র। বিএম মোজাম্মেল হক কাউন্সিলরদের অভিযোগ আমলে না নেয়াতে তারা সম্মেলন বয়কট করেন বলে দাবি করেন। সাহিদুজ্জামান খোকনের পিতা আব্দুল গনি বিশ্বাস ৭১ এ গণহত্যাকারীদের অন্যতম। তার নিজ গ্রাম গাংনীর তেরাইলে ৭১ সালে নস্কর শাহর মাথায় ঘাসের বোঝা চাপিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার লাশ ৬দিন পর্যন্ত দাফন করতে দেয়নি।
গ্রামের ওমর শাহর বাড়িতে পাকসেনা লেলিয়ে দিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এসময় ওমর আলী ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই পাকসেনাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পাকসেনাদের গুলিতে আহত ওমর আলী ভারতে পালিয়ে গিয়ে পরে মারা যায়। বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। মহাব্বতপুরের মুক্তিযোদ্ধা হবিবার রহমানের বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ১১দিন নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করে।
নবগঠিত গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাংনীর আড়পাড়া গ্রামের মকলেছুর রহমান মুকুলের পিতা আব্দুল মান্নানও কুখ্যাত রাজাকার। মান্নান ভাটপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাজদার ফকিরের বাড়িসহ গ্রামজুড়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাঠ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্যাতিত পরিবারগুলোসহ মুক্তিযোদ্ধারা পিটিয়ে হত্যা করেন রাজাকার আব্দুল মান্নানকে।
নুন আনতে পান্তা ফুরানো সাহিদুজ্জামান খোকন গাংনী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর বর্তমানে আলীশান বাড়ি তৈরী করেছেন দুর্নীতির টাকায়। লিখিত বক্তব্যেই বলা হয়েছে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে রাজাকারপুত্র মুক্ত কমিটি না হলে পরবর্তীতে কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে গাংনীর এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন জানান, তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ১৮ বছর গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়েই প্রধানমন্ত্রী তাকে নৌকা প্রতীক দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে গাংনী আসন উপহার দিয়েছেন। গত ১০ই এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শতভাগ কাউন্সিলরদের সমর্থনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। মাদকাসক্ত, সন্ত্রাসীরা দুর্নীতি করার সুযোগ না পাওয়াতে তার নামে অপপ্রচার করছেন।
তিনি আরও বলেন- সংবাদ সম্মেলন করা জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখনের দাদা সামসুল হক স্বাধীনতা বিরোধী মুসলিম লীগের লোক ছিলেন। নিকটাত্মীয়রা জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। ইসমাইল হোসেন কয়েকবার মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে, মজিরুল ইসলাম কাপপিরিচ প্রতীক এবং ইসমাইল হোসেন আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে দলের কোন পদে থাকতে পারবে না। সেই হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করা ওরা আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গসংগঠনের কোন সদস্য না। তারা শুধু সংবাদ সম্মেলন করেই ক্ষান্ত হয়নি। সোমবার সন্ধ্যায় গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন তার ক্যাডার বাহিনীকে সাথে গাংনী শহরে নিজেই পিস্তল উঁচিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন।
এদিকে মোশাররফ হোসেনের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাংনী উপজেলা শহরে তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ-র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে মোশাররফ হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এদিকে মোশাররফ হোসেনসহ তার লোকজনকে আটক ও তাদের শাস্তির দাবিতে রাতেই গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গাংনী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এ ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নবগঠিত গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটি রাজাকার মুক্ত করার দাবীতে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করার পর এদিন সন্ধ্যা রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুজ্জামান শিপু উপজেলা যুবলীগের কার্যালয়ে হামলা করেন। আত্মরক্ষার্থে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন নিজ নামীয় লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি করেন।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, তাৎক্ষণিকভাবে মোশাররফ হোসেনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। পরিস্থিতি বর্তমান শান্ত রয়েছে। ঘটনার পর থেকে গাংনী উপজেলা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোশাররফ হোসেনের ব্যবহৃত পিস্তলটি লাইসেন্সকৃত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।