শ্রীলঙ্কার অবস্থায় পড়তে পারে বাংলাদেশ - জিএম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৭ পিএম, ৬ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১৩ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় বাংলাদেশ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
আজ বুধবার সংসদের সপ্তদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
জিএম কাদের বলেন, আমরা গর্ব করি মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি। শ্রীলঙ্কার ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। কারণ, এদেরও একই ঘটনা। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসরমান দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। হঠাৎ করে অর্থনীতিতে ধস নেমে গেলো। এদের প্রধান দুটি খাত ছিল পর্যটন আর কৃষি। করোনার কারণে পর্যটন গেলো, আর কৃষিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিলো। বড় ধরনের প্রডাকশন লস হলো। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল উন্নয়নের নামে। ঋণের ভারে বসে পড়েছে। শোধ করতে পারছে না। বাংলাদেশও তাদের সাহায্য করেছিল।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধান তিনটি খাত রেমিট্যান্স, পোশাক আর কৃষি। এখানে রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। আবহাওয়া ভালো না থাকলে কৃষিতে সমস্যা হয়। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার কারণে অনেকে এখন শুল্ক সুবিধা নাও দিতে পারে। প্রবাসী আয় যেকোনও সময় যদি কমে যায়, তখন অর্থনীতি ধাক্কা খেতে পারে। যে ঋণ নিচ্ছি, সেটার ভার বইতে পারবো কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ আমাদের ঘাড়ে আছে। এগুলো শোধ করতে হবে। ওই তিনটি খাত শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা থাকবে কিনা? রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না, সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না।
প্রসঙ্গত, ক্রমাগত উন্নতিতে একযুগ আগে যে শ্রীলঙ্কা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে ওঠার পথে ছিল, সেই শ্রীলঙ্কা এখন দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। জ্বালানি তেল কিনতে না পারায় দেশটিতে এখন বিদ্যুৎ মিলছে না। গাড়ি চালানো দুষ্কর হয়ে উঠছে। কাগজের অভাবে পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। এই পরিস্থিতিতে জনবিক্ষোভে সরকারও পতনের দ্বারপ্রান্তে। সংকটে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বাংলাদেশ থেকে একবার ঋণ নেয়ার পর আবারও ঋণ চেয়েছে, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তাদের ঋণ না দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশময় একটা বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। যখন এটা নিয়ে সংসদে আলাপ হয়, দেখা যায় সরকারের মন্ত্রী স্বীকার করতে চান না। পরবর্তী সময়ে স্বীকার করার সময় বলেন, কোনও অসুবিধা নেই। সবার আয় ইনকাম বেড়েছে। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, বিদেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এখানেও বাড়বে। এটাতে করার কিছু নেই।
তিনি বলেন, গড় আয় বাড়লেও আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ ভালো নেই। বিবিএসের তথ্যমতে, গত একদশকে মজুরি বেড়েছে ৮১ শতাংশ। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৮৪ টাকা। সরকারি হিসাবে মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে দাম বাড়ার হার বেশি। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষ ভালো আছে এই কথাটা বলা হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ বেড়েছে। নিম্ন মজুরি আন্তর্জাতিক মানসীমার নিচে।
কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ঠিক। এটা আংশিক সত্য। বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমরা বিদেশ থেকে আনি না। সব জিনিসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সাধারণ মানুষের ধারণা, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কারণে মূল্য বাড়ছে। জনসাধারণ শঙ্কিত হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। মানুষের নাভিশ্বাস। সরকারি সেবার দাম বাড়ানো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, আরও বাড়বে।
রাজধানীর যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের যানজট এমন অবস্থায় গেছে, অনেকে বলছে যেন নরকে বাস করছি। মানুষ নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে। ঢাকার সড়ক যেন দিন দিন নিশ্চল হয়ে পড়ছে। আমরা উন্নয়ন চাই। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পিভাবে গ্রহণ ও সময়ে শেষ করা উচিত। বাংলাদেশের উন্নয়নের কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। তেমনভাবে দেখার কেউ নেই। সব প্রকল্প একসঙ্গে চলছে। মহাপরিকল্পনার আওতায় যানজট হতে পারে না।
কাদের বলেন, উন্নয়নের নামে রাজধানী ঢাকাকে কি নরকে পরিণত করছি? ভেবে দেখার সময় এসেছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদাররা সমস্যায় পড়েছে। জিএম কাদের বক্তব্যে তার দলের নেতা প্রয়াত এইচ এম এরশাদ ও দল জাতীয় পার্টিকে ‘স্বৈরাচার’ বলে ‘গালাগালি’ করা হয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি সংবিধান থেকে পাঠ করে বলেন, দেশে এখন ‘সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র’ চলছে। বরং তাদের আমলে ক্ষমতার ‘কিছুটা ভারসাম্য’ ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় স্পিকার ও সংসদ নেতা তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার তাগিদ জানালে জি এম কাদের বক্তব্য শেষ করেন।