তীব্র আন্দোলনের আশঙ্কায় ইশরাককে গ্রেফতার করা হয়েছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৫ পিএম, ৬ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
তীব্র আন্দোলনের আশঙ্কায় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ইশরাক হোসেনের গ্রেফতারের ঘটনা সম্পূর্ণরূপে কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক। জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আজ মতিঝিল এলাকায় শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে প্রচারপত্র বিলি করার সময় বিনা উস্কানিতে গত নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ও বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারুণ্যদীপ্ত বিএনপি’র এই বলিষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার সম্পূর্ণরূপে কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক।
তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের আশঙ্কায় ইশরাক হোসেনের মতো বিএনপি’র তরুণ নেতাকে আটক করা শুরু হয়েছে। সরকার সকল ব্যর্থতা ঢাকতে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেজন্য জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করা হলো। আমি ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পুরো দেশটাকেই এখন নরকপুরিতে পরিণত করেছে সরকার। গ্যাস নাই, চুলা ঠাণ্ডা, রাস্তায় যানজট, বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং, দুর্গন্ধময় ওয়াসার ময়লা পানি, বাজারে আগুন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ নিত্যপণ্যের দাম আওয়ামী সিন্ডিকেট লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত।
তিনি বলেন, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সরকারের ব্যর্থতা আর ইচ্ছাকৃত অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি এখন চলছে গ্যাসশেডিং। বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এই আছে, এই নেই। লাইনে পানি আছে তো গ্যাস নেই। আবার গ্যাস থাকলে, পানি নেই। তীব্র গ্যাস সঙ্কটে রোজা রেখে ইফতারিও তৈরি করতে পারছেন না মানুষ।
রিজভী বলেন, বাসায় যখন গ্যাস নেই, তখন তৈরি হয়েছে আরেক দুঃসংবাদ। ফের বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা মানুষের জন্য তৈরি করছে বাড়তি সঙ্কট। রাজধানীর যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর থেকে বেরোলেই স্থবির হয়ে যায় জীবন। যানজটে অলিগলি, প্রধান সড়ক সর্বত্রই এখন স্থবিরতা।
তিনি বলেন, একে তো তীব্র গরম, তার ওপর অসহনীয় যানজট, জীবন যেন ওষ্ঠাগত। তীব্র যানজটের কারণে লোকজনকে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। যানজটের এখন আর সকাল বিকেল বা রাত নেই। গভীর রাত এমনকি ভোরেও রাজধানী জুড়ে যানজট। ফলে লোকজন ঠিকমত অফিসে বা কাজে যেতে পারছেন না, ফেরার সময় তাদের গাড়িতে বা রাস্তাতেই ইফতার করতে হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন রাজধানীবাসীর আরেক আতঙ্কের নাম ডায়রিয়া। করোনা মহামারির প্রকোপ কমলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। প্রতি মিনিটে একজন এবং প্রতিদিন হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসার দূষিত পানির কারণে এই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ওয়াসার দুর্নীতিবাজ এমডি তাকসিম এ খান গতকাল মঙ্গলবার গর্ব করে বলেছেন, ‘আমার বাসার পানিতেও দুর্গন্ধ আছে।’ এ কথা বলার পরেও তিনি নির্লজ্জভাবে চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসায় লুটপাটের বিশাল সিন্ডিকেটের মাথার মনি করে তাকে ১৩ বছর যাবত এমডি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছেন, আর এই সময়ের মধ্যে নিজের বেতন ভাতা বাড়িয়েছেন ৪২১ শতাংশ। এখন বেতন-ভাতা পান মাসে ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন। এই এমডি’র সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে, তিনি পানির দাম ও নিজের বেতন পাল্লা দিয়ে বাড়াতে পারেন। কিন্তু দুষিত পানি বিশুদ্ধ করতে পারেননি।
এসময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।