সরকারের দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২২ পিএম, ২ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সরাতে না পারলে দেশের জনগণ স্বস্তি পাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার (২ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে এই অনশন শুরু হয় সকাল ১০টায়। বিকাল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসনকে পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা জেলায় প্রতীক অনশনের কর্মসূচি করেছে তারা। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাত ও রাস্তায় পলিথিন ও মাদুর বিছিয়ে এই অনশনে অংশ নেয়। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে গণঅনশন সমাবেশে পরিণত হয়। অনশনে নেতাকর্মীরা দ্রব্যমূল্য কমানো এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ক্ষমতাসীনদের ‘সিন্ডিকেট’ই দায়ী অভিযোগ করে এর ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানিয়ে অনশনের সূচনাতে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি হয়ে গেছে। আজকের পত্রিকায় আছে, চাল, ডাল, তেল, আটা, সবজিসহ সমস্ত জিনিসের যেহারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যা এখন মানুষের সহ্যের বাইরে চলে গেছে। এর মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এই অনির্বাচিত সরকারকে যদি পরাজিত করতে না পারি, তাদেরকে যদি ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারি তাহলে এদেশের মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। আসুন আমরা আজকে এই গণঅনশনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে প্রতিবাদ তা দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এই গণঅনশন পালন করে এই সরকারকে জানিয়ে দেন যে, আপনাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। ব্যর্থতায় দায় স্বীকার করে আপনারা সরে যান, ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তাদেরকে সরে যেতে হবে। আর একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই আন্দোলন আমাদের শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে ভয়াবহভাবে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে এই অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার। তাদেরকে যদি আমরা পরাজিত করতে না পারি, তাদেরকে যদি ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে না পারি তাহলে এদেশের মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সব কথার এক কথা সরকারের পদত্যাগ, সবার এককথা সুষ্ঠু নির্বাচন। এই লক্ষ্যে আমাদের মধ্যে বিভেদ নেই। এখন জাতীয় সরকার- কেউ আগে কেউ পরে। এই তর্কেরও বোধহয় প্রয়োজন নাই। কারণ এই সরকারকে বিতাড়িত করি। হাসিনা সরকারকে দাফন না করতে পারলে, সরাতে না পারলে যে ধরনের সরকারই চান তা হবে না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পতন ঠিক করি, তারপরে সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন করি, তারপরে দেশটা মেরামত করি।
তিনি বলেন, আইন ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা সঠিক পথে এনে যারা মুদ্রা পাচার করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনি। যারা দুর্নীতি-লুটপাট করে দেশটাকে বরবাদ করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনি। এজন্য সকলের ঐকবদ্ধ হওয়া দরকার। আর ঐক্যবদ্ধের প্রয়োজনে, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন।
তিনি বলেন, আইন ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা সঠিক পথে এনে যারা মুদ্রা পাচার করেছেন তাদের বিচারের আওতায় আনি। যারা দুর্নীতি-লুটপাট করে দেশটাকে বরবাদ করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনি। এজন্য সকলের ঐকবদ্ধ হওয়া দরকার। আর ঐক্যবদ্ধের প্রয়োজনে, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বাধীনতা দিবসের বক্ত ব্য স্পষ্ট করেছেন।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে মেরামত করি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতার চেতনায় একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র জনগণের সামনে উপহার দেই। তিনি আরও বলেন, সরকারের সুবিধাভোগী ছাড়া, আমরা ছোট-বড় সকল শক্তি একত্রিত হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করি। আমাদের কথা আর জনগণের কথার মধ্যে একটি মিল রয়েছে। আমরা এটা করি এটাই জনগণ চায়।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, লগি-বৈঠা আমাদের অস্ত্র নয়। এই অস্ত্রের প্রয়োজন আছে আজকে যারা সরকার চালায়। আমাদের অস্ত্র লগি- বৈঠা নয়। বিএনপির অস্ত্র হচ্ছে জনগণ। এই জনগণকে নিয়ে আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশে জনগণের সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা সত্যি যে, জিনিসপত্রের দাম এতো বেড়েছে, মানুষ বেকুব হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুইদিন আগে সংসদে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য জনগণের সহ্যের মধ্যে আছে। বোঝেন। ১০ টাকা চাল খাওয়ানোর কথা ছিলো সেই চালের দাম আজকে ৭০ টাকা। তারপরেও লজ্জা নাই। বলে কিনা এমন কোনো দাম বাড়ে নাই। মানুষের টাকা আছে কেনার ক্ষমতা বেড়েছে, তিন গুণ ক্ষমতা বেড়েছে যে, মানুষ কিনে কিনে খেতে পারে। মানুষের কেনার ক্ষমতা যদি বাড়ে তাহলে বাজার করবার জন্য কলকাতা যায়, দিল্লি যায়, ব্যাংকক যায়, সিঙ্গাপুর যায়। টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দেয় না। তারপরেও এক মন্ত্রী বলেন যে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তিনগুণ বেড়েছে। ও একটা মূর্খ বেয়াদব।
তিনি বলেন, একটাই কাজ করতে হবে, এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে সরকার যাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং পালাবার কোনো পথ না পায়। আমি বলি, মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরো যদি সোজা সাপ্টা বলি, মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করছি ১৭ কোটি মানুষ আপনাদের পেছনে সেই দল সরকারের নির্দেশের অপেক্ষার আর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ওরা অনুমতি দেবে না, আমি অনুমতি চাইও না। আমি যদি জনগণের জন্য আন্দোলন করি, ন্যায্য আন্দোলন করি মানুষের কাছে যাবো, মানুষের সাথে বসব, তার সাথে কথা বলব। ডাক দেবো আপনাদের, সারা বাংলাদেশ বন্ধ হয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে ওদের ক্ষমতার আস্ফালন, ওদের ক্ষমতার লাঠি ঘুরানোও বন্ধ হবে, ক্ষমতার দাপট দেখানো বন্ধ হবে, পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এজন্য সকল গণতান্ত্রিক দলকে এক হয়ে সরকার পদত্যাগের আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহবানও জানান মান্না।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় গণঅনশনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুদকার খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগরের ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের আহবায়ক হেলাল খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।
এই গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে বক্ততৃা করেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতের নুরুল ইসলাম বুলবুল, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ নেতারা।
এছাড়াও প্রতীকী অনশনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম শাহজাদা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আনু মো. শামীম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, কৃষক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহবায়ত সাজ্জাদুল মিরাজ, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খান, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল কুদ্দুস, মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, পল্টনসহ প্রেসক্লাবের আশে-পাশে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।