অর্থ পাচার ও বেগমপাড়ার যাতায়াতকারীদের জন্যই ফ্লাইট চালু - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৯ পিএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
অলাভজনক জেনেও শুধুমাত্র ‘বেগমপাড়া’র যাতায়াতকারীদের জন্যই, অর্থ পাচারের জন্য ঢাকা-কানাডার ফ্লাইট চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘এসোসিয়েশনের অব ইঞ্জিনিয়ার্স-এ্যাব’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। ‘আওয়ামী লীগের অপশাসন, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই ঢাকা থেকে টরেন্টো (কানাডা) সরাসরি ফ্লাইট করেছে, একটা ট্রায়াল ফ্লাইট হয়েছে এখন চালু করবে। গতকালই বিমানের যারা কর্মকর্তা আছেন তারা বলছেন যে, এই ফ্লাইটটা কেনো করা হলো আমরা জানি না। কারণ এটা কোনো মতেই ভায়াবেল ফ্লাইট নয়। করা হয়েছে একটা কারণেই। বেগম পাড়াতে যারা যাতায়াত করেন তাদের সুবিধার জন্য অথবা সরাসরি এখান (বাংলাদেশ) থেকে পাচার করার জন্য, সুটকেইসে ভরে, ট্রাংকে ভরে পাচার করার জন্য। গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের রাতে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যায় কানাডার টরেন্টোয়।
দেশের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ অবস্থায় আছি। আজকে দ্রব্যমূল্যের যে হিসাবটা আপনারা এখানে দিয়েছেন, দুর্নীতির যে হিসাবটা আপনারা দিয়েছেন এগুলো যদি সঠিকভাবে লক্ষ্য করা হয় তাহলে লোম শিউরে ওঠে। একটা দেশ যে দেশের মানুষ এতো কষ্ট করে তারা দিনারাত পরিশ্রম করে উপার্জন করছে সেই দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এটার কোনো জবাবদিহিতা নেই। পার্লামেন্টে এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। কারণ এই পার্লামেন্টে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নাই। দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা পেশাজীবীরা নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করেন, উজ্জীবিত করেন। দেশকে বাঁচানোর দায়িত্ব একা রাজনৈতিক দলের না, সকলের। সেখানে পেশাজীবীদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। পেশাজীবীরাই ভ্যানগার্ডের কাজটা করেন। অতীতে করেছেন আপনারা। এই সরকারের আমলেও ২০১৩ সালে যে আন্দোলন আপনারা করেছেন সেটা আমরা সবসময় মনে রাখি। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালেও করেছেন। এই আন্দোলনগুলোতে আপনাদের ওপর নির্যাতন আসবে, মামলা-মোকাদ্দমা আসবে। আপনারা পেশাজীবীরা অনেকে যারা বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের সকলের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে..। নির্যাতনের ভয়ে চুপ থাকলে আমরা বাঁচতে পারব না, আমাদেরকে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সময় খুব কম। আমাদের দ্রুত সংগঠিত হতে হবে। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি হয়ে আছেন তাঁকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসিত হয়ে আছেন তাঁকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তা প্রত্যাহার করতে হবে ...। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে একটাই মাত্র পথ, সেই পথ হচ্ছে এদেরকে জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই তাদেরে সরাতে হবে, তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে সমস্ত মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে। সেই জাগিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে অবশ্যই আমরা অতীতে পেরেছি, ইনশাল্লাহ আমরা ভবিষ্যতেও পারব। এদেরকে সরিয়ে অবশ্যই জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা রাষ্ট্র, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত পরশু পুলিশের একটা অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি ও পুলিশ কমিশনার কিছু কথা বলেছেন-আমরা বিস্মিত হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। কী করে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তারা এই ধরনের সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক অশালীন এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা বলতে পারেন এটা আমরা চিন্তা করতে পারি না। এই জায়গায় নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। যে সরকারি কর্মকর্তা যাদের রাজনৈতিক কথা-বার্তা বলা একেবারেই কনডাক্টের বাইরে সেখানে একজন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং যিনি স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রাজনীতির মধ্যে, এখনো গণতন্ত্রের জন্য গৃহবন্দি হয়ে আছেন। তাঁর সম্পর্কে এই ধরনের অশালীন উক্তি করতে পারে-এটা আমরা ভাবতেও পারি না। আমি ভাবতে পারি না- এরা শিক্ষিত মানুষ, এভাবে চাকরি করেন, বড় পদে আছেন তাদের মুখ থেকে যখন এই ধরনের কথা আসে তখন সেই চাকরি সম্পর্কে, সেই সরকার সম্পর্কে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা তৈরি হয়। আমি গতকালও বলেছি, আপনারা মনে করবেন না যে, আওয়ামী লীগই শেষ, কোনো দিন শেষ হয় না। অবশ্যই পরিবর্তন হবে এবং সেই পরিবর্তনে আপনাদেরকে এই জবাবদিহি করতে হবে। আজকে আপনারা সরকারের বেআইনি হুকুম তামিল করছেন, বেআইনি হুকুম তামিল করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আপনারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কেনো এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো? আপনারাই এই নির্দেশ দিয়েছেন মানুষগুলোকে খুন করার জন্য, মানুষগুলোকে গুম করার জন্য। যে কারণে বাধ্য হয়ে তারা করেছে এই কাজগুলো। এখন তাদেরকে (সরকারি কর্মকর্তা) বলতে চাই, সরকারের বেআইনি হুকুম মানবেন না। বেআইনি হুকুম মানলে আপানাদের ওই অবস্থায় (নিষেধাজ্ঞা) পড়তে হবে। এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনহ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় পেশাজীবী নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, কাদের গনি চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন বকুল, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম, ফখরুল আলম, এ্যাবের সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, সাধারণ সম্পাদক হাছিন আহমেদসহ প্রকৌশলী নেতারা বক্তব্য রাখেন।