মেগা প্রকল্পের নামে সরকার মেগা দুর্নীতি করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৭ পিএম, ২১ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
মেগা প্রকল্পের নামে সরকার মেগা দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও আজকের বাংলাদেশ এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে ওদের অর্জন কী? এরা (বর্তমান সরকার) বলে তাদের অর্জন মেগা প্রজেক্টস, পদ্মা ব্রিজ। আজকের পত্রিকায় আছে বিদ্যুৎ এখন থেকে নাকি শতভাগ দেয়া হয়ে গেলো। কিসের মূল্যে, কার মূল্যে এটা করলেন? এটা করতে পারেনি, মিথ্যা কথা প্রচারণা তারা করছে। তাদের দুর্নীতি করার জন্যে, তাদের সম্পদ বাড়ানোর জন্য তারা আজকে জনগণের পকেট কেটে এই সম্পদ তৈরি করছে। এই মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
দেশের মানুষের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে টিসিবির ট্রাকের পিছনে গিয়ে যারা দাঁড়ায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা জন্যে তাদের কোনো উন্নতি হয়নি, আমার গ্রামের কৃষকের পণ্যের দাম বাড়েনি, তাদের কোনো উন্নতি হয়নি, আমার শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি, তাদের কোনো উন্নতি হয়নি। আজকে আমাদের যে শিক্ষক স্বল্প বেতনে চাকরি করেন তার কোনো পরিবর্তন হয়নি, আজকে ছোট ছোট ব্যবসায়ী হকার তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে, ক্ষমতা সঙ্গে ভাগাভাগি করে লুটপাট করছে তাদের। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটা লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই লুটপাটের স্বর্গ রাজ্য আজকে নতুন না। এটা আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রির মধ্যে আছে। যখনই তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পায় তখনই তারা লুটপাট করে। সেজন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সময় বলেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম পরিবর্তন করে দিয়ে সেটাকে বলা উচিত ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি’। আজকেও একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে ‘ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা যে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি, যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য পড়েছি। আমাদের মানুষকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের এই নতজানু নীতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং স্বাধীন গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয় তবে এই সরকারকে জেটিয়ে বিদায় করার ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি, সেই লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি কথা বলেছি। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, যারা দেশপ্রেমের বিশ্বাস করে তাদেরকে আহবান জানিয়েছি যে, আসুন আমরা সবাই শুধুমাত্র একটা লক্ষ্যে যেখানে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে- সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং একটা দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে একটা গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি আজকের দিনে এটা হোক আমাদের শপথ।
বিএনপি ধর্ণা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়। আমি বলতে চাই, বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে কোনো দিন ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপির জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৯০ সালে এসেছে এবং পরবর্তীতে প্রতিবারে প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দল ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভালোবাসা নিয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আজকে দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নাই। একটা পরিবারের কাছে সার্বভৌমত্ব বন্দি। দেশের সীমান্ত এলাকায় মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে অন্যায়ভাবে। কিন্তু তার কোনো প্রতিবাদ করার ক্ষমতা এই সরকারের নাই। এই সরকার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছি, কেউ মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে কাজ করেছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আমরা কি পেয়েছি, আমাদের প্রত্যাশা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে হয়। এর থেকে দুর্ভাগ্য একটি জাতির জন্য হতে পারে না।
ঢাকা-কানাডার সরাসরি ফ্লাইট চালুর আগেই মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে সব টিকেট বিক্রি ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা-কানাডা সরাসরি বিমান চালু হওয়ার কথা তারা ঘোষণা করেছে। ২৬ তারিখ যে প্লেন যাবে আপনারা ইন্টারনেটে খোঁজ করে দেখতে পারেন সেখানে বিমান থেকে ঘোষণা করার মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে দেখা গেলো সব আসন পূর্ণ হয়ে গেছে। তিন ঘন্টার মধ্যে আর সেই বিমানে টিকেট পাওয়ার সম্ভবনা নাই। আজকে জনমনে প্রশ্ন। কারা কানাডা যাওয়ার জন্যে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছেন? আগে তো সরাসরি ফ্লাইটের ব্যবস্থা ছিল না। কারা প্রথম ফ্লাইটে যাচ্ছেন? সব টিকেট এতো দ্রুত কিভাবে বিক্রি হলো। যার জন্য এখন টিকেট দেয়া বন্ধ।
গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আপনারা (মুক্তিযোদ্ধারা) যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন একাত্তরে, সেই স্বাধীনতাটা আর নেই এদেশে। এটা মুক্ত দেশ না। এখন নতুন একটা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এসেছে এই দেশে। সেটাতে আপনারা সবাই অংশগ্রহণ করবেন। ইনশাল্লাহ যদি আল্লাহ আমাকে সুযোগ দেয় আমিও থাকবো সেই যুদ্ধে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জালেম সরকারকে আমাদের সরাতে হবে। আমাদের গণঅধিকার পরিষদের উদ্দেশ্য মানুষের অধিকার ফেরত দেয়া একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা মোটামুটি একই জিনিস চাই। অন্য ব্যাপারে মতবিরোধী থাকতে পারে তবে এই সরকারকে যেতে হবে এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই-এই ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। গণতন্ত্রের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার একাগ্রতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আপনাদের যে সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এতো সাহসের সাথে এতো বছর যুদ্ধ করছেন আমি ওনাকে দেখে সবসময় আমার একটা অনুপ্রেরণা হয় যে, এতো সাহস এই মানুষটির মধ্যে। এটাতে আমি আশ্বর্য হই। উনি আসল সম্মানী লোক বাংলাদেশে। আমি আশা করি, এই সম্মানটা কোনো মানুষের কেড়ে নেয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের এই সময়ে ‘লুটতরাজ’ করে কানাডাসহ বিদেশে যেসব বাড়ি-ঘর কিনেছে তার আয়ের উৎস্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।