দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টাকে আড়াল করতে সরকার ‘জিডিপির শুভঙ্করের ফাঁকি’ দেখাচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৩ পিএম, ১৪ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টাকে আড়াল করতে সরকার ‘জিডিপির শুভঙ্করের ফাঁকি’ দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে এক স্মরণ সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা ফোরাম’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। গত বছর ১৬ মার্চ মওদুদ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কী ভয়াবহ কান্ড এদেশে যে মানুষ দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। সরকার সেটাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছে এবং তার মন্ত্রীরা হেসে হেসে বলে যে, আরে দাম যেমন বেড়েছে, আয়ও তো বেড়েছে। কার আয় বেড়েছে? এরা জিডিপির (জাতীয় প্রবৃদ্ধি হার) শুভঙ্করের ফাঁকি দেখায়। জিডিপি কাকে বলে? সব কিছু মিলিয়ে যেটা আসে সেটাকে বলে জিডিপি অর্থাৎ উৎপাদন থেকে যেটা আসে গ্রোথ। তারপর বলে যে, পারক্যাপিটা ইনকাম এতো হয়েছে। মাথাপিছু আয় (পারক্যাপিটা ইনকাম) কিভাবে হিসাব করা হয় তার ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আয় করি মাসে ৫০ হাজার টাকা আর আমার যে ভাই আয় করে মাসে ৫ হাজার টাকা- এই দুটা কী এক? এই দুইটা মিলে যদি দুই ভাগ করেন তাহলে পারক্যাপিটা ইনকাম কিন্তু ওর আসবে ২৫ হাজার, আমার আসবে ২৫ হাজার। বাস্তবে তার আয় তো ২৫ হাজার নয়। এদেশের ৯০ ভাগ মানুষের আয় কম, আয় কম হচ্ছে। দেশের দারিদ্র্য শতকরা আরো ২ ভাগ বেড়েছে। এই যে বিষয়গুলো আজকে অবলীলায় মানুষকে প্রতারণা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, তারা গণতন্ত্র সম্পর্কে কি করছে? নির্বাচন সম্পর্কে কী করেছে? নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে যাতে আরেকটা সেই ধরনের নির্বাচন করা যায়। এবার মানুষ সেটা শুনবে না, এবার মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে, রুখে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয়নি।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের জাতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, আমাদের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে আশা-আকাক্সক্ষা ছিলো একটা গণতান্ত্রিক দেশ, একটা সার্বভৌম দেশ, একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যদি নির্মাণ করতে হয়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন যদি বাস্তবায়িত করতে হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্বপ্নকে যদি বাস্তবায়িত করতে হয় এবং আমাদের অগণিত মানুষ যারা প্রাণ দিয়েছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য তাদের যদি মূল্য দিতে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবীয় স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যে কথাটা আমাদের মওদুদ আহমদ সব সময়ই বলতেন।
মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সহধর্মিণী অধ্যাপক হাসনা মওদুদ বলেন, রাজনৈতিকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা ওঠে। আমি তারেক রহমানকে অত্যন্ত স্নেহ করি। আমি বলতে চাই, ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে যদি ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার হতে পারে এবং সেই ছেলের ছেলেও যদি প্রাইম মিনিস্টার হওয়ার পথ পেতে পারে তাহলে তারেক রহমান কেনো হতে পারবে না। তার যে বুদ্ধি মেধা। সে তো এখন সব কিছু চালিয়ে যাচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে তিনি বলেন, আজকে আমাদের সব চেয়ে বড় দুঃখ হলো আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি নাই। মওদুদ আহমদ বলে গেছেন যে, তিনি মুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে চান। আমি মওদুদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত দেখতে চাই। আমি নোয়াখালী-৫ আসনের এলাকার গরীব মা-ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াতে চাই- সেটাও কিন্তু আমার মওদুদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জন্য। মওদুদের দুইটি অপ্রকাশিত গ্রন্থ ‘চলমান ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্ব’ এবং ‘ডিমাইজ অফ ডেমোক্রেসি’ প্রকাশের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তার সহধর্মিণী।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুকের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, কৃষক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমসহ স্বাধীনতা ফোরামের নেতারা। আলোচনা সভার পর মরহুম নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা ও প্রতিবাদ : দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে লিফলেট বিতরণকালে ফেনী জেলাধীন সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর নবী মেম্বার, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী মিলন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা তাঁতী দলের সাবেক সদস্য সচিব নাসির উদ্দিন, ইউনিয়ন যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন মিয়াজি ও আবু মনসুর রিয়াদের বাড়িতে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং ও যুবদল কর্মী হেলালকে বেদম প্রহার করে। একইভাবে সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে লিফলেট বিতরণের সময় নেতাকর্মীদের হুমকি প্রদানসহ লিফলেট ছিনিয়ে নেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণের সময় ঝিনাইদহ জেলাধীন কালীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য রবিউল ইসলাম মেম্বারের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে আওয়ামী ক্যাডাররা। এ ধরনের ঘটনাকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণকালে নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া হামলা ও খুন, জখমে মেতে উঠেছে আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা বিএনপিসহ দেশের বিরোধী দলগুলোকে নিন্ডিহ্ন করার মহা পরিকল্পনারই অংশ। সমগ্র দেশে আওয়ামী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার মনোবাসনায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে দেশবাসী এক ভীতিকর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। আওয়ামী ক্যাডাররা ফেনী জেলাধীন সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন এবং ঝিনাইদহ জেলাধীন কালীগঞ্জ ইউনিয়নে বিএনপির উদ্যোগে শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণকালে নেতাকর্মীদের ওপর যে তান্ডবলীলা চালিয়েছে তাতে আবারও প্রমাণিত হলো আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসনির্ভর একটি রাজনৈতিক দল। আসলে এই সরকার ক্ষমতা থেকে সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত এদেশের মানুষের হরণকৃত নাগরিক স্বাধীনতা ফিরে আসবে না। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।