মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৭ পিএম, ১৩ মার্চ,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চড়া দামের কারণে মানুষ খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছে। টিসিবির লম্বা লাইনে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও স্বল্প আয়ের মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, চাল-ডাল-আটা-গুঁড়ো মসলা ও শাক-সবজি আজ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বেগুন-আলু ও সবজির গায়ে হাত দিলে বৈদ্যুতিক শকড হয়। মানুষ একবেলা ও আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছে।
আজ রবিবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, চৈত্রের খরতাপের মধ্যে নিম্নআয়ের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু টিসিবি সারাদেশে মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ পণ্য দিতে পারে। সারাদেশের মানুষ চড়া দামে জিনিসপত্র কিনছে, অন্যদিকে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কী একটা ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মধ্যে জীবনযাপন করছি। এখন আবারও সেই ’৭২ থেকে ’৭৪-এর কথা আমরা শুনছি, যখন কি না বাসন্তী-দুর্গারা শাড়ি না পেয়ে মাছ ধরার জাল দিয়ে লজ্জা নিবারণ করেছে। যারা ভাত-রুটি না পেয়ে আম গাছের পাতা, কাঁঠাল গাছের পাতা চিবিয়ে খেয়েছে। এরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বাংলার প্রান্তরে প্রান্তরে। দুর্ভিক্ষের ছায়া বিস্তার করেছে চতুর্দিকে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দুর্ভিক্ষ, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, দেশের মানুষ আধপেটা খেয়ে থাকে আর উন্নয়নের নামে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে এখন বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দিন যাচ্ছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা বসে আছেন তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই, এ কারণেই আকাশ ছোঁয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। আওয়ামী লীগের আমলে গত ১০ বছরে বিদ্যুতের দাম ৯০ শতাংশ, গ্যাসের দাম ১৪৪ শতাংশ, ডিজেলের দাম ৮২ শতাংশ এবং পানির দাম ২৬৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। যা পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক দেশে হয় না।
নতুন নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, এ নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মনে করি অবৈধ সরকার অবৈধ আইনের মাধ্যমে এ কমিশন গঠন করেছে। সুতরাং পরবর্তী পর্যায়ে কী হবে সেটা আমাদের দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী দুদিন আগে বলেছেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর বিএনপির অন্যায়-অবিচার একই বিষয়। আমি আইনমন্ত্রীকে বলছি, আপনি আপনার প্রধানমন্ত্রীকে বলুন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার কী এবং কত প্রকার? এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করতে গিয়ে মানুষ পুড়িয়েছেন, ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন, এ তত্ত্বাবধায়কের জন্য তিনি কী পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। এ সময় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সহ-সভাপতি গোলাম সারওয়ার, আনু মোহাম্মাদ শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সর্দার নুরুজ্জামানসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে লিফলেট বিরতণ : তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোহাম্মদ মোহন, মোশারফ হোসেন খোকন, আব্দুস সাত্তার, হারুন-উর-রশিদ হারুনসহ মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দ। লিফলেট বিতরণের সময় আবদুস সালাম বলেন, সরকারের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণেই দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতি। এ সরকারের মাধ্যমে আর দ্রব্যমূল্যের কোনভাবেই লাগাম টানা সম্ভব নয়। এ সরকার জনগণের কোনো কল্যাণই করতে পারবে না। তাদের মধ্যকার দুর্নীতিবাজরা অধিক মুনাফার জন্যই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আজ সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ এ সরকারকে বলতে হচ্ছে ‘এনাফ ইজ এনাফ’, এবার তোমরা বিদায় হও। নয়াপল্টন ছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সকল থানা এবং ওয়ার্ডের এলাকায়-এলাকায় লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চলছে। মহানগর ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।