‘সরকার পুরো দেশকে নির্যাতনের কারখানা বানিয়ে ফেলেছ’
ক্ষমতাসীনরা ‘বাজার সিন্ডিকেট’ করে ‘পকেট’ ভারী করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪১ পিএম, ৯ মার্চ,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১০ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ক্ষমতাসীনরা ‘বাজার সিন্ডিকেট’ করে ‘পকেট’ ভারী করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সরকার পুরো দেশকে নির্যাতনের কারখানা বানিয়ে ফেলেছ।’ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নির্দলীয় সরকার ও নির্দলীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে।
আজ বুধবার বিকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি’র প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (সরকার) জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারবে না। কারণ ওইখান থেকে তারা ভাত খায়, তাদের নেতারা সিন্ডিকেট করে সেখান থেকে তারা ভাত খায়, পকেট ভারী করে, করছে। দুর্নীতি করে সমস্ত দেশকে তারা ভরে দিয়েছে। এই যে মেগা প্রজেক্ট দেখছেন...। গত ১০ বছর ধরে ঢাকা শহরের মানুষদের কী কষ্ট যাচ্ছে। ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকা, পদ্মা সেতুর প্রজেক্ট ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে ওরা নিজেদের পকেটে টাকা ভরছে। আমাদেরকে জনগণের এই কষ্ট দূর করতে হবে, আমাদের মা-বোনদের ওই টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ করতে হবে, আমাদের যেসব ভাইরা গুম হয়ে গেছে তাদের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার গোটা দেশটাকে নির্যাতনের কারখানা বানিয়ে ফেলেছে। আপনারা কী সত্যজিত রায়ের সেই হীরক রাজার দেশ ছবিটি দেখেছেন? একটু দেখবেন। হীরক রাজার দেশে এসব ঘটনাই ঘটিয়েছিল হীরক রাজা। তারপর একদিন সমস্ত মানুষ যখন ক্ষেপে উঠলো, হীরক রাজা একটা বড় মূর্তি বানিয়েছিল। এটা যেদিন উদ্বোধন করবে সেইদিন সব মানুষ ওই মূতিতে দড়ি লাগিয়ে বললো, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান। আমাদেরকেও দড়ি ধরে টান মারতে হবে, ওদের গদি খান খান করতে হবে, তাদের তখতে তাউস ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা রাজপথে নেমে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগে বাধ্য করতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেই।
কথা বললেই নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে- অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা ঢাকায় সাবা নামের একটি মেয়ের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তার বাবা গুম হয়েছে। আমরা কি খোঁজ নিয়েছি পরিবারটি কেমন আছে? গতকাল তার মা ফোন করেছিল বড় ছেলে অসুস্থ। চিকিৎসার খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই। এই অবস্থা সবখানে চলছে। কী অপরাধ ছিল তাদের। তারা কথা বলতে চেয়েছিল। এখন কথা বললেই মামলা দেয়া হচ্ছে। আকারে ইঙ্গিতে কথা সরকারের বিরুদ্ধে গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকারকে হটাতে হলে সকলকে অলি-গলি, পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়তে হবে, যার যার পাড়া-মহল্লায় একত্রিত হয়ে নামতে হবে। বেশিদিন শুধুমাত্র প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করলে সরকার দীর্ঘস্থায়ী হবে, আন্দোলনও দীর্ঘায়ু হবে। আমরা বক্তৃতাও সংক্ষেপ করতে চাই, সরকারের মেয়াদও সংক্ষেপ করতে চাই। আর সেজন্য দরকার কঠোর আন্দোলন, রাজপথের আন্দোলন। সুতরাং নেতাকর্মীদের বলবো, সরকারকে সব দিকে কাবু করার জন্য যা করা দরকার মনে মনে হিসাব-নিকাশ করেন। আন্দোলনের জন্য আপনারা যেদিন পারবেন আমরা সেদিনই আপনাদের সাথে মাঠে নামবো।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাদরেজ জামানের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, গণশিক্ষা বিষয়ক সহ সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সহ সভাপতি গোলাম সারোয়ার, আনু মোহাম্মদ শামীম, রফিক হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, সদস্য বিথিকা বিনতে হোসাইন, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ান উল হোসেন রিয়াজ প্রমুখ।