থানায় পুলিশের হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিলেন রিমান্ডের আসামি যুবলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৯ পিএম, ৯ মার্চ,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৪৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানায় পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন এক রিমান্ডের আসামি। যুবলীগ নেতা ওই আসামিকে রিমান্ড আদেশের পর আদালত থেকে থানায় আনা হয় প্রাইভেটকারযোগে। আসামির হাতে ছিল না কোনো হ্যান্ডকাফও।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যার পরে এ ঘটনা ঘটে।
ওই আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুল সদ্য শেষ হওয়া ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০ নং বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের কুবাদ আলীর ছেলে। তার সাথে ছিলেন রিমান্ডের আরো ৪ আসামি।
জানা গেছে, পঞ্চম ধাপে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ্বাস, ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ অনেকে। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শিমুল।
নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নানা বিরোধ আর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসবের জেরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে পেঁয়াজের ক্ষেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামের এক যুবককে। তিনি বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা (মামলা নং ৩) দায়ের করেন।
মামলায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে করা হয় হুকুমের আসামি। হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম থেকেই মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অনিহাসহ নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেয় বাদির পরিবার। করা হয় সংবাদ সম্মেলনও।
এ ঘটনায় আফান ও সজিব নামে এই মামলার মাত্র দুজন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আর শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ্বাস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি নামে পাঁচ আসামি ২ মার্চ আত্মসমর্পণ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক তৌফিক আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চান। তবে বিজ্ঞ আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার হুকুমের আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ এই পাঁচজনকে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়।
স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই রিমান্ডের আসামিদের পুলিশের গাড়িতে করে না এনে ব্যক্তিগত গাড়িবহরে তিনটি প্রাইভেটকারে করে আনা হয় শৈলকুপা থানায়। এদিকে এসব আসামির কর্মী-সমর্থকরা আগে থেকেই থানার ভেতরে-বাইরে ভিড় জমায়। তারা থানার ভেতরেও স্লোগান দিতে থাকে, আসামিদের মুক্তি দাবি করে। এক পর্যায়ে ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। শফিকুল ইসলাম পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তার হাতে ছিল না কোনো হ্যান্ডকাফও। তিনি হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য রাখেন, নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এদিকে রিমান্ডের আসামিদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদি মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা ন্যায়বিচার পাবো বলে মনে করছি না।
হত্যা মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক জানান, আসামিদের কারো ব্যক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। আর আসামিদের হাতে হ্যান্ডকাফ না থাকা ও পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলছেন, বিষয়টি নিয়ে ওসি (তদন্ত) এবং থানা পুলিশ বলতে পারবে।
শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেন জানান, ভাড়া করা গাড়িতে আসামিদের আনা হয়েছে, আর হ্যান্ডকাফ না লাগিয়ে থানার পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামির হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন বলেন, রিমান্ডের কোনো আসামির সাথে কখনো কখনো স্বজনরা দেখা করতে পারে, তবে অন্য কেউ দেখা করার বিধান নেই।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডের কোনো আসামি এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না। তিনি থানায় ছিলেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।