যদি আ'লীগ ক্ষমতায় থাকে, কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না : মির্জা আব্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৮ পিএম, ১ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশ আজ অদ্ভূত এক দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে ৪০ টাকা ডিমের হালি, তেলের দাম ১৮০ টাকা, ১২৬০ টাকা গ্যাসের চুলা, ৭০ টাকা চাল, ১২০ টাকা ডাল। সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু বাড়েনি মানুষের দাম। একদিকে মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিশেহারা আর সরকারের নেতা পাতি নেতারা ব্যস্ত লুটপাটে। মফস্বলের ছাত্রলীগ নেতার অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় দুই হাজার কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিল। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো তফাৎ নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, আপনারা আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সময় একটি সুন্দর বাংলাদেশ ছিল, গুম-খুন ছিল না, দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হত না। এই প্রধানমন্ত্রীর সময় গুম-খুন হচ্ছে। দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। দেশের মানুষ কথা বলতে পারে না। কথা বললে গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মী সবাইকে মামলা দেয়া হয়েছে। এই প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আর গণতন্ত্র ফিরে না এলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকার জন্য সাজা দেয়া হয়েছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই, দুই কোটি টাকা বেগম জিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে রাজনীতি করব না। দুই কোটি টাকা আট কোটি টাকা হয়ে গেছে। একটা টাকাও তসরুফ হয়নি। বিএনপির নেত্রীর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা, বিএনপির অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন রাজত্ব করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গুম-খুন।
মির্জা আব্বাস বলেন, মন্ত্রীরা বলছেন, কোনো গুম-খুন নাকি হয়নি। গুম-খুন যদি না-ই করে থাকেন, তাহলে স্যাংশন দেয়া হল কেন ? গণতন্ত্রকে হত্যার দায়ে, মানুষ খুনের দায়ে, গুমের দায়ে স্যাংশন দেয়া হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আপনারা চোরের দল, আপনারা লুটের দল, আপনারা খুনির দল, আপনারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর দল, এটা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। পুলিশ ভাইদের বলব, আপানারা আমাদের মিছিলে হামলা করেন, মিটিংয়ে হামলা করেন। কিন্তু ক্ষমতা হারালে তারা যখন পালাবে, আপনাদের কি সাথে নিয়ে যাবে ? সুতরাং সরকারের অন্যায় আদেশ নয়, রাষ্ট্রের নিয়মনীতি মেনে চলেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনার সরকারকে এক মুহুর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম কমবে না। তাই বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকারের নির্বাচন কমিশনকে দেশের জনগণ মানে না। তারাও ২০১৪ ও ১৮ সালের মতো নির্বাচন করবে। কিন্তু সে নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে বন্দী করা মানে গণতন্ত্রকে বন্দী করা। সরকারের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইবো না, আমরা তাকে মুক্ত করবো।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটা আরেকটি হুদা কমিশন। নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বীর চট্টলা আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়গা। এই চট্টগ্রাম থেকে এরশাদের পতন হয়েছে, শেখ হাসিনার পতন হবে। আমরা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার কর্মী, আর আওয়ামীলীগ হচ্ছে লুটপাটকারী দল। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী। বেগম খালেদা জিয়া নয় বছর আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আর শেখ হাসিনা তা ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশ যখন বিপদে পড়েছে জিয়া পরিবার হাল ধরেছে। এই করোনায়ও আওয়ামী লীগের লোকজন লুটপাট ছাড়ে নাই। তাই তারেক রহমান বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ হয়েছে। প্রশাসনের সর্বত্র সরকারের লোকজন। যারা নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সরকারের সুবিধাভোগী। সরকার তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। অনুগত বলেই তাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনার দুর্নীতির যে ইতিহাস, গুম খুনের যে ইতিহাস, সেজন্য তাকে বাংলাদেশের মানুষ একদিন মমি করে রাখবে। ২০১৮ সাল ও ২০২২ সাল এক নয়। আগের মতো নিশিরাতের নির্বাচন আর করতে দেওয়া হবে না। এই চট্টগ্রাম থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে এই সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দুর্নীতির কারণে এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ২০-২৮ শতাংশ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বাজারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। তারা কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। চরম দুর্নীতির প্রভাব বাজারে গিয়ে পড়ছে। লাগামহীনভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জনগণকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য চাল-ডাল-তেলসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে দেশের মানুষ আর্থিক দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের প্রকৃত আয় অনেক কমে গেছে। মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিন্মবিত্তে চলে গেছে, যা বেশিরভাগ মানুষ বলতে পারেন না-এটাই বাস্তবতা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় অনুষ্টিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান। বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, শ্রমিকদলের নুরুল্লাহ বাহার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সি. সহ সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, মহিলাদলের ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী, কৃষকদলের সদস্য সচিব কামাল পাশা নিজামী, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, মৎস্যজীবী দলের হাজী নুরুল হক প্রমূখ।