দেশের মানুষকে বাচাতে জেগে উঠুন - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৫ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৬ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
গণ-পেনশনের নামে সরকার আরেকটা ‘লুটের কায়দা-কানুন’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে জেগে উঠুন। সরকার দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। তাই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করছে। সর্বব্যাপী সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আজ শনিবার বিকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’ এবং ‘উপজেলা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি’র দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১১ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে এই সমাবেশ হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের চারপাশ, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঈদগাহ সড়কের ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটা লুটেরার দলের পরিণত হয়েছে। এই লুটপাট করে, সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, এখন নাকি গণ-পেনশন দেবে, মানুষকে পেনশন দেবে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি- এটা আরেকটা লুটের কায়দা-কানুন তারা করতে যাচ্ছে। মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নেবে। ৬০ বছর পরে দেবে। এর মধ্যে মারা গেলে আর ফেরত পাবে না। পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। যদিও এটা পাস হয়নি কিন্তু এই প্রস্তাব তারা নিয়ে এসেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন শুধু মাত্র কি করে লুট করা যায়, কি করে মানুষের পকেট কাটা যায় সেই ব্যবস্থা তারা করেছে। মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান তারা করতে পারছে না। এই সরকারের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে লুটপাট করছে না। তারা মানুষকে বিপদে ফেলছে। আজকে সমস্ত বাংলাদেশে একটাই সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে-আওয়ামী লীগ। মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করতে শুরু করেছে। মানুষ গালিও দেয়- এই তুই মানুষ না আওয়ামী লীগ। এটা হয়ে গেছে সব জায়গায়-গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র। দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দেখছি এখন প্রতিদিন এই যে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রাকে করে সেখানে প্রতিদিন লাইন লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে। সেই লাইনে মধ্যবিত্তরাও যাচ্ছেন কারণ তাদেরও প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে গ্যাসের দাম প্রতিবছরে ২/৩ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে প্রতি বছর ২/৩/৪ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে পানির দাম বার বার করে বাড়ানো হচ্ছে। এর কারণ একটাই- এই সরকার তার নিজের এবং সমস্ত প্রশাসন যন্ত্রকে দুর্নীতির একটা স্বর্গ রাজ্য বানিয়ে দিয়েছে। পানির দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে যে, ওয়াসার যে এমডি আছেন তাকে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার বেতন কত জানেন? কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। এই যে অপচয়, এই যে একজন বিশেষ লোককে দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়া সেই কাজটা করছে সরকার। আজকে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি একটা সর্বগ্রাসী ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ছে কেনো? উৎপাদনের তো ঘাটতি আছে। প্রতিবছর সরকারকে ৫৭ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলেছে তারা। সর্বক্ষণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। আপনারা শুনেছেন যে, বিদ্যুতের দাম কেনো বাড়াতে হচ্ছে। যে চুরিগুলো তারা করেছে, কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট অথবা বিদ্যুতে দ্রব্যসামগ্রি আমদানি করতে যা ব্যয় করছে তাতে এতো বেশি পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে সেখানে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকছে না। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী ও এক উপদেষ্টার টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে গেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে যিনি এই সরকারের আইটি উপদেষ্টা সেই সঙ্গে তিনি বিদেশে থাকেন, তার একটা বিশেষ প্রজেক্ট নিয়ে তারা কথা বলছিলেন। আমরা বার বার বলেছি, এই বিষয়টা পরিষ্কার করে বলতে হবে, জনগণকে জানাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছে-এটা সত্য কথা। তাদেরকে আমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, এই গুম করে, খুন করে, হত্যা করে, নির্যাতন করে কোনো দিন জনগণের আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। কোনোদিন যায়ওনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভর্তুকি দেয়া আর যাবে না। আমি বলতে চাই, দরকার হবে না তো। চুরি বন্ধ করেন, লুট বন্ধ করেন ভর্তুকি দিতে হবে না। চুরি করছেন, লুট করছেন ভর্তুকি দিতে হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে সকলকে মাঠে নামার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সর্বত্র একটাই আওয়াজ- হাসিনা তুমি বিদায় হও, এই জনগণকে মুক্তি দাও। আমরা পথে নেমেছি, রাস্তায় নেমেছি। জনগণের কাছে আবেদন জানাতে চাই যে, আসুন আজকে আপনার শরিক হোন। তরুণ-যুবকদের আহবান জানাতে চাই, জেগে উঠুন দেশ মাতৃকার ডাকে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহবান জানাতে চাই, আসুন এক সাথে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করি। বিজয় আমাদের অবশ্যই হবে ইনশাল্লাহ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের একটি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে স্যাংশন দিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটাকে দূর করার জন্য তারা (সরকার) লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। মাসে ২০ হাজার ডলার দিতে হবে তাদের। এতোদিন তো লম্বা লেকচার মারলেন, অনেক কথা বললেন। এখন কেনো এই লবিস্ট নিয়োগ করছেন। কারণ একটাই যে, জনগণের টাকা, ট্যাক্সের টাকা তা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জনগণের ওপর নির্যাতন করা, গুম করা, খুন করা তাকে হালাল করছেন, তাকে আড়াল করতে চাইছেন। ওই যে কয় না- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, সেই ধর্মের কল বাতাসে নড়ছে। এখন চর্তুদিকে ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে। আর উপায় নাই। যতই ওলট-পালট করেন, যতই লবিস্ট নিয়োগ করেন আর যতই পাল্টা ডিগবাজি দিতে থাকেন, সুন্দর কথা বলেন লাভ নেই। মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনুসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের অপশাসন, এই সরকারের দুর্নীতি, এই সরকারের অত্যাচার, এই সরকারের সিন্ডিকেট আজকে বাংলাদেশের জনগণের নাভিশ্বাসের কারণ হয়েছে। আজকে ট্রাকের থেকে খাদ্য ক্রয়ের জন্য হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে, মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে গেছে, দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর অন্যদিকে এই সরকারের দুর্নীতির মাত্রা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকে ধনী আরো ধনী হয়েছে, গরীব আরো গরীব হয়েছে। এটা আমাদের কথা নয়, আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়। হঠাৎ করে লাফিয়ে লাফিয়ে তেলের দাম বাড়ছে, চালের দাম বাড়ছে। কী বাড়ছে না? ধনী থেকে দরিদ্র পর্যন্ত কেউ এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সকলেই ভুক্তভোগী। তবে একটা জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে না- সেটা হলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে না। এদেশের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নাই। হয় গুলি খেয়ে মরতে হবে, না হয় জেলে পুরে মরতে হবে, নয় তো এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে আমাদের মাঠে নামতে হবে।
ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ইউনুস মৃধার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুদস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, জাসাসের আহবায়ক হেলাল খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার, শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুল করীম মজমুদার, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।
এছাড়াও বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মো. শওকতুল ইসলাম সৈকত, ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মো. শাহজাহান রাব্বি, ৯৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।