বিদায়ী সিইসির মতো ব্যক্তিদের নামের তালিকাই সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪২ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৪ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিদায়ী সিইসির মতো ব্যক্তিদের নামের তালিকাই সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সর্বশেষ বৈঠকের প্রাক্কালে দুপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এরকম মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে ‘ফসলের মাঠে কৃষকের আত্মহত্যা : ফ্যাসীবাদী শাসনের খন্ডচিত্র’ শীর্ষক এই প্রতিবাদ সভা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর মানিকচাঁদ গ্রামে শাসকগোষ্ঠিরর প্রভাবশালী মহল কর্তৃক সেচ পাম্প স্থাপনে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে নিজের ফসলের মাঠে কৃষক শফিউদ্দিন আত্মহত্যা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আবার নির্বাচিত হবার জন্যে এখন তারা (সরকার) তাদের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই কমিশন গঠন করার জন্য একটা সার্চ কমিটি গঠন করেছে, আইনও তৈরি করেছে। সবগুলো হচ্ছে জনগণকে বোকা বানানোর জন্য। এই সার্চ কমিটি যাদের দিয়ে করেছে সব তাদের লোক। প্রত্যেকটাই একটাও বাদ নেই। আজকে আবার নাকি সেটার নামগুলো পাঠাবে প্রেসিডেন্টের কাছে। যাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে দেখা যাবে যে, সেই হুদার (কেএম নুরুল হুদা) মতোই লোক হবে।
বিদায়ী সিইসির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে- কিচ্ছু নাই এটার মধ্যে। তার ট্রায়াল করতে হবে, তার বিচার করতে হবে। অনেকে তাকে বলে যে, বেহুদার মতো। নো। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া, বাংলাদেশের মানুষের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধবংস করে দেয়া-এজন্য তো তার বিচার হতে হবে। তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, অবশ্যই দাঁড়াতে হবে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারকে জবাব দিতে হবে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বৃদ্ধি করছে বার বার। কারণ একটাই শুধুমাত্র চুরির জন্য। এখানে একজন বলেছেন যে, চাল-ডাল-তেলেল দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। সরকারকে জবাব দিতে হবে কেনো চালের দাম বাড়ল? যে চাল আমাদের সরকারের আমলে ছিলো সর্বোচ্চ ১৭/১৮ টাকা সেটা এখন আপনার ৬০/৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। কেনো সোয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে? যেটা আমাদের সময় ছিলো ৫৪ টাকা সেটা এখন ১৮০ টাকা। কারণটা কী? চুরি, দুর্নীতি। প্রতিক্ষেত্রে দুর্নীতি। এই যে দুর্নীতি এই দুর্নীতির সঙ্গে একেবারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাষ্ট্রের সমস্ত অংশগুলোকে এরা জড়িয়ে ফেলেছে। কোনো ফাঁক নেই যেই খাতে দুর্নীতি নেই। মাথাপিছু মানুষের আয়বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের পরিসংখ্যানও ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, আজকে প্রতিটি মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তারা এই সরকার থেকে মুক্তি চায়। আওয়ামী লীগ একুশের চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ভূলুণ্ঠিত করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিলো তা ধ্বংস করে দিয়েছে। কথাটি তথ্যমন্ত্রীর গায়ে খুব লেগেছে, তিনি বলেছেন এটা নাকি আমরা করেছি, তারা করেনি।
এখন আর জবাবদিহিতা নেই মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওয়াসা পানির দাম বাড়াচ্ছে। তারা বলছে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। খরচা কিসে বেড়েছে? ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে বেতন দিচ্ছো ৬ লক্ষ টাকা করে। আর চুরির শেষ নেই। পকেট কাটছে জনগণের। আজকে গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। বলছে কুলাচ্ছে না। বিদুৎতের দাম বাড়াচ্ছে কুইকরেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করে এমনভাবে চুরি করছে যে, এখন সেই বিদ্যুতের দাম বছরে তিন-চারবার করে বাড়ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমনপীড়ন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আরেকটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আজকে যারা জনগণকে হত্যা করছে, আজকে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে যেমন কালকে সুনামগঞ্জে একজন গ্রেফতার করে নিয়ে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আইনরক্ষাকারী বাহিনী করেছে। শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কত দিন ধরে আন্দোলন করল। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি চরমে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। কোন সেক্টরটা আছে? একটা সেক্টরও নাই। গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কৃষক দলকে সংগঠিত হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বিশ্বাস করি, কাউকে দরকার হবে না। এক কৃষককে যদি সংগঠিত করা যায় তাহলেই আমরা এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে পারবো। বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস হচ্ছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্যময় ইতিহাস। এখানে তেভাগার আন্দোলন হয়েছে, এখানে ফকির বিদ্রোহ হয়েছে, এখানে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা দিয়ে যুদ্ধ হয়েছে। কৃষকরাই এখানে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। আজকে কৃষির কিছু মৌলিক পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের কৃষকদলকে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে তারা দলের ওপরে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন যে, তার দল কৃষক বান্ধব পলিসি দিতে বাধ্য হয়। যখন সরকারে আসবে তখন কৃষি বান্ধব পলিসি গ্রহণ করে। অর্থাৎ কৃষক দল একটা বড় রকমের ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করে। আমার আস্থা আছে এখন যে নেতৃত্ব এসেছে তারা সেটা করতে সক্ষম হবে।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, নাসির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, এসএম ফয়সাল, আলহাজ খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম, ওমর ফারুক শাফিন, সৈয়দ অলিউল্লাহ সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক শাহ আবদুল্লাহ আল বাকী, মাহবুদা হাবিবা, ইশতিয়াক আহমেদ নাসির প্রমুখ।