ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫১ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সময় খুব কম। আমাদেরকে অতিদ্রুত নিজেদেরকে সংগঠিত করতে হবে, আমাদেরকে অতি দ্রুত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে এই ভয়াবহ সরকার যারা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তারা দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই তাদের সরাতে হবে।
আজ রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘মহান ভাষা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওমিক্রনের দীর্ঘ এক মাস পর এই প্রথম বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। আজকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মরণ করে, আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে আজকে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণায় আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ি। দেশনেত্রীকে মুক্তি করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে নিয়ে আসি, দেশে সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।
দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এখন যে অবস্থা বা সংকট এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক দল ও মতকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই ছিলো আমাদের জাতিসত্তা নির্মাণের প্রথম ভিত্তি। কিন্তু আজকে খুব দুর্ভাগ্যের কথা, সেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের যে চেতনা ছিলো, যে আশা-আকাক্সক্ষা ছিলো যে একটা স্বাধীন, সুস্থ, একটা গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজ নির্মাণ করা এবং তারই ধারাবাহিতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা লড়্ইা করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্যে স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজকে সেই আশা-আকাক্সক্ষা, সেই চেতনা আমাদের ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। আমরা অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে, ক্ষোভের সঙ্গে, ধিক্কারের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ১৯৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে চেতনা ও আকাক্সক্ষা তাকে এই আওয়ামী লীগ নামের একটা দল, যে দলটি একেবারে সমস্ত মানুষের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরে শেষ করে দিয়েছে। আজকে ৭০ বছর পরেও সত্যিকার অর্থে আমরা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করতে পারি নাই।
তিনি বলেন, আজকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে, যারা ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন তারা যা চেয়েছিলেন আমরা কী বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে চালু করতে পেরেছি? পারিনি। উপরন্তু আমরা দেখছি, আামাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হচ্ছি যে, আমাদের বাংলা ভাষা আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে এবং আমাদের সন্তানেরা, আমাদের ছেলেরা তারা ভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন ভাষায় লেখা পড়া করছে এবং সবাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতির জন্য আমরা কখনোই আশা করিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই আওয়ামী লীগ সরকার তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুচিন্তিতভাবে বাংলাদেশের যে আলাদা সত্তা, বাংলাদেশের যে আলাদা পরিচিতি-অস্তিত্ব সেটাকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন সত্যিকার অর্থেই একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেখুন এই সরকার আসার পর থেকে আমাদের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সেটাকে ভেঙ্গে ফেলেছে, আমাদের যে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিলো সেই ব্যবস্থাকে তারা ভেঙে ফেলেছে, আমাদের জনগণের যে ভোটের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকবার যে অধিকার, তাদের ন্যূনতম কর্মসংস্থানের অধিকার তা তারা ধবংস করে দিচ্ছে। তারা সমস্ত দেশটাকে লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেছে। একে একে শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করেছে, একে একে স্বাস্থ্য খাত ধবংস করেছে, অর্থনীতিকে তারা একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার আবারো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। দুর্নীতি দমন কমিশনও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেখেছেন দুর্নীতিতে দেশ এখন ভরে গেছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের যে কর্মকর্তা যিনি অনেকগুলো দুর্নীতি মামলার দেখেছেন তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন আজকে পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা কথা বলছেন সেই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে গেছে। সেই ফোনালাপে বলা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় যিনি এই সরকারের অনেক বেতন পাওয়া একজন উপদেষ্টা তার একটা প্রজেক্ট, সেই প্রজেক্ট পাস করার জন্য মন্ত্রী কথা বলছেন উপদেষ্টার সঙ্গে এবং সেখানে দুই বিচারককেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সচিবালয় ফাইল মুভমেন্ট করার কথা বলা হয়। আমরা সুস্পষ্ট করে বলেছি, আমরা জানতে চাই এই কথোপকথনের মধ্যে কি আছে। এই কথোপকথনের মধ্যে যে বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে সেই বিষয়ের তদন্ত চাই। এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। নইলে জনগণের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিলো সেই পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে যে সিদ্ধান্ত তাকে না মেনে সেই চাপে মাথা নত না করে বীরের মতো সেইদিন আমাদের সেই পূর্বপুরুষরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। তারা পাকিস্তানিদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। এই ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা, এই ভাষা দিবসে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে আমাদের মাথা নত না করা, এই ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে যদি রুখে দাঁড়ানো যায় সাহসের সাথে তাহলে সেই দাবিকে আদায় করার শিক্ষা। ভাষা আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সকলকে সংগঠিত হওয়ার আহবান জানান তিনি। ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে এই সরকারে হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করে মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে হলে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বুকে সাহস নিয়ে সবাইকে দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত, মানুষের ভোটাধিকার নেই, দেশে গণতন্ত্র নেই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বলে বেড়ায় বিএনপির মাঝে কোনো গণতন্ত্র নাই। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক সংজ্ঞায় বিএনপি বিশ্বাস করেন না। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র হচ্ছে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্র নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যে সংজ্ঞায় বিশ্বাস করে তার বিপরীতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস। তার বড় প্রমাণ আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণতন্ত্র নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে কাজেই আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যেতে পারে না। বাকশালকে গণতন্ত্র বোঝায়, গণতন্ত্রের নামে আসলে তারা ফ্যাসিজম।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হকসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।