ইসি গঠনে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫২ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:০২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ‘সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী। তিনি বলেন, দেশে ক্যান্সার ব্যাধির মতো দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, এমন কোনো যায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না। দেশে এখন ভয়াবহভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে সরকার। কয়েকদিন আগে মন্ত্রীসহ দুজনের কথোপকথনের রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে সেখানেও দুর্নীতির কথা বেরিয়ে আসছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি করছেন ভিসিরা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করছেন তারা দুর্নীতি করছেন, এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি করা হচ্ছে না।
আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘দি ইউনিভার্সেল একাডেমী’র উদ্যোগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জীবন-কর্মের ওপর ‘স্মৃতির অ্যালবাম’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। ২৭২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দি ইউনিভার্সেল একাডেমী। যার মূল্য ধরা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দেখুন যে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলো, সংগ্রাম করেছিলো সেই বাংলাদেশের মানুষকে আজকে তাদের ন্যূনতম যে অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। আমরা আগেই বলেছি যদি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা না হয়, তাহলে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করে কোনো ফায়দা নেই। আজকে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে এটা জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজকে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন করে, তার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে পুরোপুরি জনগণকে বোকা বানিয়ে আবারো সেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একটা নির্বাচন কমিশন বানিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগের) ক্ষমতাকে তারা পাকাপোক্ত করতে চায়, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য নামের প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে সকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির বৈঠকে বসে। তারা দশ জনের নামের তালিকা করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমান দেয়ার জন্য এই সার্চ কমিটি কাজ করছে। ইতিমধ্যে তারা চারটি বৈঠকও করেছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে।
দুদক কর্মকর্তার চাকরিচ্যুত প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের পত্রিকা খুললে দেখবেন দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে এবং কেনো অপসারণ করা হয়েছে? তিনি যে ব্যক্তিগুলোকে চিহ্নিত করেছিলেন যে, এরা দুর্নীতি করছে ব্যাপকভাবে বিশেষ করে কক্সবাজারের দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে। সেই মানুষগুলোই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তিনি নাকি দুর্নীতিপরায়ণ। কোনো রকমের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এই দেশে দুর্নীতি একটা ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেটার সম্পূর্ণভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে সরকার।
গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত আইনমন্ত্রী-উপদেষ্টার কথোপকথন, চাঁদপুরে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির অধিগ্রহণে শিক্ষামন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনের সম্পৃক্ততার সংবাদ তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকেও আবার একটি পত্রিকায় দেখলাম যে, ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গির যে রাস্তা এই রাস্তার প্রতি কিলো মিটারের খরচ দেখানো হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা যা পৃথিবীর কোথাও নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীত এবং এটি ছড়িয়ে পড়েছে ক্যান্সারের মতো ব্যাধির মতো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতি করছেন ভিসিরা, এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করছেন তারা দুর্নীতি করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, মেডিকেল কলেজগুলোতে দুর্নীতি করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-শিক্ষাতে এমন একটা জায়গা নাই যেখানে দুর্নীতি করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ’৭১ সালে আমরা একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজকে গণতন্ত্রকে পুরোপুরি নির্বাসিত করা হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু তারা সবসময় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই সরকার আমাদের সমস্ত অর্জনগুলেকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লড়াই করে আমাদের যে অর্জন আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের অধিকার সবকিছুই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা তুল দেশ ও দলের জন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সবসময় সব কালে জন্মায় না। এরা ক্ষণজন্মা মানুষ। তাদের সারাটা জীবন তার কাজের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। ড. মোশাররফ তার জীবনে যেখানে হাত দিয়েছেন সফল হয়েছেন। তিনি দীর্ঘজীবী হোন, তিনি আরো বহু সময় ধরে এই জাতিকে নেতৃত্ব দেন, আমাদেরকে নেতৃত্ব দেন। তার জ্ঞান, তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা তিনি আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেন- এই আশা, এই কামনা করছি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই গ্রন্থ কোনো প্রবন্ধ বা কোনো নভেল বা সাহিত্য নয়। আমার জীবনে আমার কাছে যে সকল ছবি সংরক্ষিত ছিলো আমার মনের ভেতরে পরিকল্পনা আসলো যেহেতু এই ছবিগুলো আমার আছে সেগুলো দিয়ে একটা বই হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে, ছবি কথা বলে। ছবি কথা বলে তাহলে আমার জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্র জীবন, লন্ডনে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার কিছু স্মৃতি, পারিবারিক, রাজনৈতিক, আমার রাজনীতির বাইরেও যে সামাজিক কাজ-কর্ম রয়েছে যেসব ছবি আমার কাছে সংগ্রহ আছে সেগুলো আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিগুলো শেয়ার করে যেতে চাই বলে এই গ্রন্থটি করেছি। এই গ্রন্থটি আমি উৎসর্গ করেছি আমার নাতিদেরকে। আমার স্নেহাস্পদ নাতি খন্দকার মাশরাফ হোসেন, নিশান ইসলাম, খন্দকার ইশরাক হোসেন ও খন্দকার মিরাফ হোসেন, নাতনি মিহিরা সিয়ারা খন্দকারসহ দেশে-বিদেশে বসবাসরত তাদের সমবয়েসী বাংলাদেশি নাতি-নাতনিদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সুপ্রিম কোর্টের নবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, আলোকচিত্র সাংবাদিক নুর উদ্দিন আহমেদ নুরু, প্রকাশক শিহাব উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীসহ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন।