বিনাভোটের এই সরকারে যিনি যত প্রভাবশালী তিনি তত প্রতাপশালী দুর্নীতিবাজ : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৩ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৯ এএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত এক যুগের বেশী সময় জাতির ঘাড়ে জবরদস্তি করে চেপে থাকা অবৈধ আওয়ামী সরকারেরই এখন উন্নয়নের নামে মহা-দুর্নীতির জয়জয়কার চলছে। গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই দেখা যায় ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের মহোৎসবের খবর।
বিনাভোটের এই সরকারে যিনি যত বড় প্রভাবশালী তিনি তত প্রবল প্রতাপশালী দুর্নীতিবাজ। দেশ এখন আওয়ামী দুঃশাসনের দুর্বৃত্তায়ন ও ইতরায়নের দখলে। কাগজে-কলমে অসংখ্য কোটিপতির কথা বলা হলেও দেশে বুভুক্ষ মানুষের দীর্ঘ লাইন। সন্তান বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করছে। শিক্ষিত তরুণরা শুধুমাত্র দু'বেলা ভাত খেয়ে ছাত্র পড়াতে চাচ্ছে। অন্যদিকে গুটি কতক মানুষ দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের রক্ত চুষে নিয়ে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে বলে মন্তব্য করেন এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিশিরাতের সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এই হাইভোল্টেজ আলাপনই এখন 'টক অব দ্য ইউনিভার্স'। একজন হলেন সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অপরজন হলেন নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কথিত ডিজিটালাইজড করার নামে দেশে দুর্নীতির যে রমরমা বাণিজ্য চলছে এই দুই ব্যক্তির কথায় সেটি দৃশ্যতঃ প্রমাণিত। ফোনালাপে শুধু এই দুই ব্যক্তিই নয়, দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে মোস্তফা জব্বার নামে বিনাভোটের আরেক মন্ত্রীর নামও উঠে এসেছে। এই তিন ব্যক্তিই কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে একাট্টা হয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শোনা যায়, সালমান এফ রহমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে একটি প্রজেক্ট পাশ করে দেয়ার কথা অনেকটা ধমকের সুরেই বলছেন, 'কোনো টেন্ডার লাগবেনা, এটাতো জয়ের প্রজেক্ট'। যেহেতু জয়ের প্রজেক্ট সেহেতু প্রজেক্ট যেভাবে এসেছে সেভাবেই প্রজেক্ট রিলিজ করে দেয়ার কথাও আনিসুল হককে জানিয়ে দেন দরবেশ নামে পরিচিত সালমান এফ রহমান। আনিসুল হক জানিয়ে দিয়েছেন, জয় যেভাবে চেয়েছে তিনি সেভাবেই করে দিয়েছেন। এটির বাস্তবতা কি আমরা জানিনা, তবে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের ফোনালাপ ফাঁসের খবরে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। দেশব্যাপী দুর্নীতির এটি খন্ডচিত্র মাত্র।
রিজভী বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিতর্কিত আড়িপাতা যন্ত্র কিনে বছরের পর বছর ধরে বিরোধী দল কিংবা ভিন্নমতের মানুষের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করে আসছে। এরপর নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে অবৈধভাবে রেকর্ড করা ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে তার ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার কিংবা মিডিয়া ট্রায়াল করে সরকার। এইবার নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়েছে।
আসলে রাষ্ট্র কে চালাচ্ছে, সেটি নিয়ে জনমনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে, নিশিরাতের সরকারের দুই মন্ত্রী আর দুই উপদেষ্টার দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ গোটা দেশের জনগনের সামনে স্পষ্ট। উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর ফোনালাপ দুর্নীতির সামান্য নমূনা মাত্র। তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। দেশের জনগণ ঝড় ঝঞ্জার রাতে উত্তাল অকুল পাথার সমুদ্রে কোথাও কোন লাইট হাউজের দেখা পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, দেশে এখন চলছে দুর্নীতিবাজদের প্রলয় উল্লাস। এইসব মাফিয়া এবং দুর্নীতিবাজরা বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে থাকতে গণতন্ত্রের কথা শুনলেই এদের এখন গায়ে জ্বালা ধরে। এর প্রমাণ হাসান মাহমুদ।
রিজভী আরো বলেন, বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে 'ক্যানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন' (সিএইচআরআইও) 'মাদার অফ ডেমোক্রেসি' এবং 'ডেমোক্রেসি হিরো' এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। তবে দেশনেত্রীর জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে এমন সম্মানে হাসান মাহমুদরা চরম আত্মপীড়ণ ও মনোকষ্টে ভুগছেন। এ কারণে হাসান মাহমুদ বলেছেন, এই অ্যাওয়ার্ড নাকি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। তার এই মন্তব্য শুনে একটা বাংলা প্রবাদ মনে পড়ছে, পাগলে কিনা বলে ...........কিনা খায়। কিনে পদক পাওয়ার সংস্কৃতি তো আওয়ামী লীগ নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। পদক কিনে বস্তা ভরার ইতিহাস তো আপনাদেরই। ক্ষমতাসীন হলেই আপনাদের কাছে বানের স্রোতের মতো পদক আসে। আপনার বক্তব্যে প্রমাণ হলো-অতীতে আপনারাই পদক কিনেছেন।
রিজভী বলেন, এখন নিজের মনে প্রশ্ন জাগে, বিবেকহীনরাই কি এখন আওয়ামী লিগ করে নাকি আওয়ামী লীগ করার কারণেই মানুষ বিবেকহীন হয়ে যায়।