বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৭ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৬ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড। প্রতিদিন মেডিকেল বোর্ডের কোনো না কোনো সদস্য তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ সাবধানতা অবলম্বন করেই সব করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন তাঁর যে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা সব সময় রয়েছে। কারণ তাঁর লিভার সিরোসিসের যে চিকিৎসা, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি এখনও। এ দেশে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়।
এর আগে বেগম খালেদা জিয়া বাসায় ফেরার দিন সন্ধ্যায় তাঁর স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তিনি এখনও সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসকরা। গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে বাসায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয় তাঁর জন্য।
বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখনও পুরোপুরি সুস্থ না হলেও মহামারির এই সময়ে আবার কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে তাঁকে বাসায় পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে হাসপাতালে ফেরত আনা হবে।
‘উনার দুইটা কন্ডিশন। এক নম্বর হচ্ছে, উনি ক্লিনিক্যালি স্টেবল বাট নট কিউর। বাট সি ইজ নট ফ্রি অব ডিজিস। দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের কোভিড পরিস্থিতির জন্য, সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য এবং সি ইজ ভেরি মাচ ভালনারেবল। সে জন্য আপাতত উনাকে বাসায় পাঠাচ্ছি। এরপরে যদি কোনো রকম ক্রাইসিস হয়, উই আর রেডি টু রিসিভিং হার এগেইন ইন হসপিটাল।’
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যতগুলো পসিবল ট্রিটমেন্ট ছিল, তা আমরা দিয়েছি। আমরা হসপিটালের ডাক্তারদের সাথে, বাইরের কনসালটেন্টের সাথে, অন্যান্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেছি। আমরা বিদেশি কনসালটেন্টদের সাথে ইউকে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কনসালটেন্টদের সাথে কথা বলেছি। সবারই একই মত যে, আপাতত আমরা কনট্রোল করেছি। বাট সি নিডস টু গো এবরোড ফর হার পারমেন্ট ট্রিটমেন্ট।’
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশ পাঠাতে তাঁর দলের দাবি তোলার পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও আইনি জটিলতার কথা বলে আসছে সরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে কারাগারে ফিরে আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে। তখন সরকার সেই আবেদন বিবেচনা করতে পারে, তার আগে নয়।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী জানান, এই দফায় ভর্তির আগে গত নভেম্বরে যখন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন তাঁর একটি টিউমার অপসারণ করা হয়েছিল।
সুস্থ না হলেও কেন ছাড়পত্র মেডিকেল বোর্ড দিচ্ছে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘উনার ব্লিডিং আপাতত বন্ধ হলেও তার অসুখের ট্রিটমেন্ট সেভাবে হচ্ছে না। এখন উনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তবে যে কোনো সময় আবার রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।’ ‘এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সারাদেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালে (এভারকেয়ার) ৩৮০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে উনার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই মুহূর্তে উনার কন্ডিশন যেহেতু স্টেবল, সেহেতু আমাদের তত্ত্বাবধানে বাসায় রেখে উনার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।’
লিভার সিরোসিসের চিকিৎসার বিষয়ে অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘লিভার সিরোসিসের যে চিকিৎসা, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি এখনও। যে ভ্যাসেল দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেই রক্তের প্রবাহটা বাইপাস করে টিপসের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া, তা আমাদের দেশে নেই। উন্নত চিকিৎসা সে জন্য প্রয়োজন।’