শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাৎ, আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৪ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪১ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শাশুড়ির শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বগুড়ার আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে।
গতকাল মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত এই অভিযোগ দেন তার চার শ্যালিকা-মাহবুবা খানম আমেনা, নাদিরা শরিফা সুলতানা খানম, কানিজ ফাতেমা পুতুল ও তৌহিদা শরিফা সুলতানা। আনোয়ার হোসেন রানা বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে বগুড়ার প্রায়াত শিল্পপতি সেখ সরিফ উদ্দিনের মেয়ে আকিলা শরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের আগে শরিফা সুলতানা খানমের স্বামীর মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন রানা। সম্পদ আত্মসাতের ঘটনায় গত বছরের ৫ অক্টোবর মেয়ে ও মেয়ের জামাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন সেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম। ওই মামলায় স্ত্রীসহ গ্রেফতারও হন রানা। উচ্চ আদালতে জামিন আবেদনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ধরাও পড়েন এই দম্পতি। এখন অবশ্য ওই মামলায় জামিনে রয়েছে তারা।
এদিকে, দুদকে দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাসে দেড় হাজার টাকায় দেলওয়ারা বেগমের বড় জামাতা সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘দৈনিক দূর্জয় বাংলা’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন শাখার কর্মী ছিলেন রানা। ২০০৬ সালে সাইফুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী আকিলা শরিফা সুলতানার দিকে নজর পড়ে রানার। স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি আকিলা শরিফা সুলতানাকে পালিয়ে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জানা গেছে, সেখ সরিফ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেখভাল করছিলেন। কিন্তু অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় তিনি তার বড় মেয়ে আকিলা শরিফা সুলতানা ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রানাকে পারিবারিক সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে সম্মতি দেন। পরবর্তীতে মেয়ে ও মেয়ের স্বামী ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, এফডিআর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জোরপূর্বক নিয়ে নেন। এ ছাড়া কিছু কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক হিসাবে বর্ধিত টাকাসহ এফডিআর ভেঙে এবং ব্যাংক হিসাব থেকে শত কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, নামে বেনামে অনেক জমি রয়েছে তার। এ ছাড়া করেছেন অত্যাধুনিক বাড়ি। সম্পদের বিশালতার পরিচয় দিতে ব্যবহার করেন কোটি টাকা দামের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। রানার বিরুদ্ধে অংশীদারদের ঠকিয়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত আরও শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে শ্বশুরের বগুড়ার শাকপালা মৌজার ২০ শতাংশ, সূত্রাপুর মৌজার ৯৮ শতাংশ জমি এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের ১৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া শাশুড়ি দেলওয়ারা বেগমের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে সংরক্ষিত এফডিআর ও গচ্ছিত প্রায় শত কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
বগুড়া শহরের শাকপালায় এসআর প্রিন্টিং প্রেস এবং শরীফা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন নামে এই আওয়ামী লীগ নেতার দুটি অত্যাধিক স্বয়ংক্রিয় প্রিন্টিং প্রেস রয়েছে। এই দুই প্রেসে বিড়িতে ব্যবহারের জন্য অবৈধভাবে ব্যান্ডরোল ছাপানোর অভিযোগ আনা হয়। সরিফ বিড়ির অবৈধ ব্যান্ডরোল ছাপিয়ে সরকারকে অন্তত ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।