করোনাঝুঁকি এড়াতেই বাসায় যাচ্ছেন খালেদা জিয়া : মেডিকেল বোর্ড
বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪০ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১০ এএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনার বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী। তবে এভারকেয়ারে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানেই বাসায় বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে বলেও জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। এর মধ্য দিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ৮১ দিন পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া।
ডা. মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে মেজর ব্লিডিংয়ের চান্স সম্ভবত থামানো গেছে। তারপর সিসিইউতে রেখে আমরা আরও ছয়দিন পর্যবেক্ষণ করি। তখনও দেখেছি, ওনার আর ব্লিডিং হচ্ছে না। তবে তিনি ঝুঁকিমুক্ত নন। আবার যে কোনো সময়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এরপর আমরা ওনাকে শিফট করে কেবিনে নিয়ে আসি।
বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এ সদস্য আরও বলেন, একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখা প্রয়োজন, ওনার মূল যে অসুখ সেটার যে প্রসিডিউর হাই-প্রেসারের টোটাল সাপোর্টেশনের জন্য বাইপাস ট্রেন তৈরি করে দেয়া, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি। আমরা যেটা করেছি, দৃশ্যমান বড় যে বেসিকগুলো ফেটে যাচ্ছিল সেগুলোকে ব্যান্ডিং করেছি, ব্লক করা হয়েছে। ওনার অবস্থা স্টেবল আছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আবার যে ব্লিডিং হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান সমস্যা লিভার সিরোসিস। এই রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা লিভার পরিবর্তন করা। যা কোনভাবে বাংলাদেশে রেখে সম্বব নয়। শুধুমাত্র বিদেশের কয়েকটি এডভান্স সেন্টারে এর চিকিৎসা সম্ভব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদের সঞ্চলনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. লুৎফর আজিজ, ডা. শাহরিয়ার, ডা. আরমান রেজা, ডা. আল মামুন, ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. আবু জাফর ও ডা. কবির প্রমুখ।
বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া : টানা ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স-কর্মচারীদের সাথে বিদায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সাড়ে ৭টায় রওনা হন এবং নেতা-কর্মীদের প্রচন্ড ভিড় ডিঙিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় ফিরোজায় পৌঁছান তিনি। বাসায় পৌঁছালে বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুর সাত্তারসহ বেগম খালেদা জিয়ার ভাই মরহুম সাইদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার প্রমুখ তাঁকে স্বাগম জানান। নেতা-কর্মীদের ভিড়ে গাড়ি বাসায় ঢুকাতেও নিরাপত্তা কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় আগমনে গুলশানের বাসায় সড়কের দুই পাশে কয়েক শ নেতা-কর্মী ভিড় করে। তারা গেটের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নেত্রীকে হাত তুলে সালাম জানায়। ওই সময় নেত্রী মাস্কপরা অবস্থায় গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
উল্লেখ্য, গেল বছরের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই দফায় বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে যেতে হয়। ৭৬ বছর বয়সী এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছরের ১১ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁর করোনামুক্তির খবর দেয়া হয় ৯ মে। ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে কেবিনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর ১৬ দিন পর, সব মিলিয়ে তখন প্রায় পৌনে দুই মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। এর মধ্যে করোনার দুই ডোজ টিকাও নেন। এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ অক্টোবর তাঁর ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর হয় বায়োপসি পরীক্ষা। সেবার প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ ফিরেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর সপ্তাহ যেতে না যেতেই সবশেষ গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান মেডিকেল বোর্ড। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানানো হলেও অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে সরকার কোনোবারই সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।