বাকশাল করেও শেষ রক্ষা হয়নি, এই নির্বাচন কমিশন আইন করেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০২ পিএম, ২৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪৬ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জনগণের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি পাসের পর দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা আপনাদেরকে জানিয়েছি যে, এই আইন পাস করার কোনো এখতিয়ার এই সংসদের নেই। কারণ এই সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সংসদ নয়। নির্বাচন কমিশনের এই আইন আমরা মানি না। এই আইন শুধু আমাদের কাছে নয়, সারাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, গ্রহণীয় হতে পারে না। আর যে আইন মানুষ গ্রহণ করে না-এটা কোনো আইনই নয়, সেটাকে কেউ মানবে না, এটাকে কেউ মানবেই না। জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে ‘বাকশাল : গণতন্ত্র হত্যার কালো দিবস’ পালন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা আরেকবার বাকশালে ঢুকতে চাই না। আমরা বলেছি, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তারা সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং তাদের পরিচালনায় সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। তারা ঠিক করবেন কিভাবে দেশ চলবে, কিভাবে দেশ চলবে না। সংসদে ‘তড়িঘড়ি করে’ আইন পাসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাকশাল গঠিত হয়েছিলো সংসদে মাত্র ১১ মিনিটে। আমি এই মাত্র খবর পেয়েছি যে, একজন সাংবাদিক বন্ধু বললেন যে, নির্বাচন কমিশন আইন পাস হয়ে গেলো। আমি হিসাব করে দেখলাম, এই আইন ১৭ তারিখে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেছে। ২৩ তারিখে পার্লামেন্টে দেয়া হয়েছে। তারপরে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে সংসদীয় কমিটিকে এটা আপনার সংযোজন বা পরিবর্তন কিছু থাকে তা নিয়ে এসে আবার সেটা হাউজে উপস্থাপন করতে। চব্বিশ ঘন্টাও যায়নি, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তারা এটা হাউজে নিয়ে এসে পাস করল। আওয়ামী লীগ সেদিনও বাকশাল করেছিলো নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টায়, আজকেও তারা একটা নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করলেন এটা ভাবছেন যে, তারা বেঁচে যাবেন এই আইনটা পাস করে। সেই আশাই করলেন। কিন্তু তারা ভুলে গেলেন যে, বাকশাল করেও শেষ রক্ষা হয়নি, এই নির্বাচন কমিশন আইন করেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ২৪ ঘণ্টা মিথ্যা কথা বলে। তাদের অভিধানের মধ্যে সত্য কথা বলা নেই। সেই মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে সত্য ঘটনাগুলোকে অবলীলায় তারা চাপা দিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই লুটপাট করে। এখনো লুটপাট করছে। শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনিকে নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ করছে সেটা অবিলম্বে তদন্তের দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতে কিছু হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামে কতকিছু হলো শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আশা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেখানে আমাদের কর্মসূচি হয়েছে সেখানে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমাদের এমন কর্মসূচি দিতে হবে মানুষ এই সরকারকে বের করে দেবে। দেশে ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। পাশাপাশি সবাইকে টিকা নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সক্রিয় হওয়ার কথা বলেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দেশে গতকাল নতুন রূপে বাকশাল কায়েম হয়েছে। মানুষ কথা বলতে পারে না। সাংবাদিকরা লিখলে সাগর-রুনির পরিণতি ভোগ করতে হয়, জেলে যেতে হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে টুঁটি চেপে ধরে রেখেছে। অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বাকশাল কি জিনিস তা নতুন প্রজন্ম জানে না। সে সময় মায়ের বুকে যুবকরা ঘুমাতে পারতো না। আওয়ামী লীগ ও রক্ষীবাহিনী গণবাহিনী আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ মানেই গণতন্ত্র হত্যা। যখনই এরা ক্ষমতায় আসে তখনই খুন-গুম ও লুটতরাজের স্বর্গ তৈরি করে। লুট করে নেয় বাকস্বাধীনতা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে! লবিস্ট কি জিনিস তাইতো আমরা জানতাম না। ১৪ সালে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে নানা অপকর্ম ঢাকতে আপনারাই অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন। আপনারা বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুম করছেন। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করছেন, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা কি বিশ্ব দেখে না?
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কপাল ভালো। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। জনগণ রাজপথে অলরেডি নেমে গেছে। জনতার স্রোতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে যাচ্ছে। সংক্রমণ একটু হ্রাস পেলে দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশে ক্ষমতাসীনদের অপকর্ম, গণতন্ত্র বন্দি ও ভোটাধিকার হরণের তথ্য বিশ্ব জেনে গেছে। আন্তজার্তিকভাবে দেশের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। যার সন্তান খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে তাদের মায়ের কান্নার শব্দ কি বিশ্ববাসীর কানে যায় না। বিদেশিরা দেশের মানবিকতার অবস্থা দেখতে আসতে চায়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আসতে দিতে চান না। সরকারের অপকর্মের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা ঢাকতে সরকার আবারও লবিস্ট নিয়োগ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আমেরিকায় আমাদের চেয়ে বেশি অন্যায় হয়, বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। তার মানে তিনি নিজেও স্বীকার করলেন দেশে অপকর্ম হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আজকে বিশ্ব বিবেককে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর এক বক্তব্যে বলেছিলেন, মানুষ পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। যেদিকে তাকাই সব আমার লোক। সব চাটার দল। সেই চাটার দলই এখন ক্ষমতায়। যে কারণে এদের কাছে সুশাসন আশা করা যায় না। দেশের সম্পদ লুটপাট করা ওদের চরিত্র।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।