গণতন্ত্র হত্যা দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৮ পিএম, ২৫ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বাণীতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার লক্ষ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের গলাটিপে হত্যা করে বহুদলীয় ব্যবস্থার স্থলে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ কায়েম করে।
এই ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে তারা জাতীয় সংসদে বিরোধী মতামতকে উপেক্ষা করে এক প্রকার গায়ের জোরেই অমানবিক মধ্যযুগীয় চতুর্থ সংশোধনী আইন পাস করে। সব সংবাদপত্র বাতিল করে তাদের অনুগত চারটি প্রকাশনা চালু রাখার ফরমান জারি করে। দেশবাসীর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলে অর্জিত মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তারা ভূলুন্ঠিত করে সমাজে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের ঘন অমানিশা ছড়িয়ে দেয়। বহু চক্রান্তের চোরাগলি দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর এখন আবারও অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার বাকশালী চেতনায় নতুন করে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রকে ভূগর্ভে সমাহিত করে, যা বর্তমানে ভয়াল একদলীয় দুঃশাসনের আত্মপ্রকাশকে প্রণোদিত করেছে।
এদের ঐতিহ্যই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার বিপন্ন করা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের ভরাডুবির বিপদ টের পেয়ে তারা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। হুকুমবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আইনের শাসনের শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলা হয়েছে। একদলীয় বর্বর শাসন দীর্ঘায়িত করার অলীক স্বপ্নে শুধু গণতন্ত্রই নয়- দেশের ঐক্য, সংহতি ও সার্বভৌমত্বকে তারা সংকটাপন্ন করে তুলতেও দ্বিধা করেনি। বিরোধী দলের প্রতি আচরণে তারা কখনই সভ্য রীতি-নীতি অনুসরণ করেনি।
কারাগার হচ্ছে এখন বিরোধী দলের ঠিকানা। দুর্বিনীত দমন-পীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সুতরাং নব্য বাকশালী জগদ্দল পাথরকে অপসারণ করার লক্ষ্যে জনগণ আজ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, আবারও কঠিন সংগ্রাামের মধ্য দিয়ে চেপেবসা গণতন্ত্রবিরোধী কর্তৃত্ববাদী শক্তিকে পরাভূত করে আমাদের রক্তস্নাত বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাকে চিরকাল কুক্ষিগত করার অসৎ উদ্দেশ্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। একটি মাত্র দল বাকশাল ছাড়া অন্য সকল দল এবং সরকার অনুগত ৪টি সংবাদপত্র ছাড়া সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মানুষের বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, সভা-সমাবেশ এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে তারা বাকস্বাধীনতা ও মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করে মূলত মানবাধিকারকেই পদদলিত করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে ভুয়া ভোটের নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে এখন দেশে দ্বিতীয় বাকশালী রাজত্ব কায়েম করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুপরিকল্পিতভাবে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিবে বলেই আগেভাগে আওয়ামী সরকার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে। অসহনীয় দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে দেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য সরকার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। কথা, চিন্তা, বিবেক, মত প্রকাশ, সংগঠন ও সমাবেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে হুকুমবাদের দৌরাত্ম্যে। বহুত্ববাদিতা বিনষ্ট করে মানব সমাজের সামাজিক স্থিতি ও ভারসাম্য নষ্ট করা হয়েছে। তাই এখন সর্বত্রই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দখলবাজদের দখলের জয়জয়কার চলছে। অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা, আশ্রয়, পেশা, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু এখন নৈরাজ্যের করাল গ্রাসে নিপতিত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সবসময় জনগণের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় অঙ্গিকারাবদ্ধ। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত এবং বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।